নারী সাংবাদিকেরা কতটা নিরাপদ

২০১৭ সালে মেক্সিকোতে নারী সাংবাদিক মিরোস্লাভা ব্রিচকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদ জানান সাংবাদিকেরা।  ছবি রয়টার্স
২০১৭ সালে মেক্সিকোতে নারী সাংবাদিক মিরোস্লাভা ব্রিচকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদ জানান সাংবাদিকেরা। ছবি রয়টার্স

মেক্সিকোর একটি জাতীয় দৈনিকে মাদক পাচার, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করতেন মিরোস্লাভা ব্রিচ। নিজের বাড়ির সামনেই আটবার গুলি করে তাঁকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার আগে বন্দুকধারী ছোট্ট একটি বার্তা রেখে যান, ‘অতিরিক্ত মুখ খোলার জন্যই এই পরিণতি’। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ হত্যা করা হয় এই নারী সাংবাদিককে।

 বিশ্বজুড়েই নারী সাংবাদিকেরা নিরাপত্তাহীনতা ও কাজের পরিবেশ নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভুগছেন। একাধিক গবেষণায় উঠে এসেছে, লিঙ্গবৈষম্য থেকে শুরু করে যৌন হয়রানি—এ ধরনের বহু প্রতিবন্ধকতা পার হয়েই সাংবাদিকতা করতে হয় তাঁদের।

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে কাজ করা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নারী সাংবাদিক দুজন।

পাশের দেশ ভারতে নারী সাংবাদিকদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি গবেষণা করে দেশটির ন্যাশনাল কমিশন ফর উইমেন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২১ শতাংশ নারী কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের বঞ্চিত মনে করেন। ২৯ শতাংশ নারী মনে করেন, সন্তান জন্মদানের পর পদোন্নতির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। প্রায় ২৫ শতাংশ নারীর অভিমত, তাঁরা নিজেদের পছন্দমতো বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ পান না। যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রায় ২৩ শতাংশ নারী। তবে নির্যাতনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেছেন মাত্র ১৫ শতাংশ নারী।

 ২০১৫ সালে পাকিস্তানের নারী সাংবাদিকদের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫৫ শতাংশ নারী সাংবাদিক ই-মেইলে অশোভন বার্তা ও হুমকি পেয়েছেন। গত বছর প্রকাশিত ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন’ নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি তিনজন নারী সাংবাদিকের মধ্যে দুজন অন্তত একবার অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৬০০ নারী সাংবাদিকের ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

হয়রানির শিকার হওয়ায় নারীদের মধ্যে সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহও কমছে। চলতি বছরের সিপিজের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রায় ৮৫ শতাংশ নারী সাংবাদিক মনে করেন, সাংবাদিকতা এখন নারীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।

নারীদের জন্য সাংবাদিকতা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সেফটি ইনস্টিটিউটের (আইএনএসআই) ২০১৭ সালে প্রকাশিত ‘কিলিং দ্য মেসেঞ্জার’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বিশ্বজুড়ে কাজ করতে গিয়ে নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে ১৩ শতাংশ নারী। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইরাকের মসুল শহরে বোমা হামলায় নিহত হন কুর্দি নারী সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ শিফা গারদি। একই বছরের সেপ্টেম্বরে দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে নিহত হন প্রথিতযশা ভারতীয় নারী সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ।

কর্মক্ষেত্রে নারী সাংবাদিকের ঝুঁকি কমাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের বিকল্প দেখছেন না নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা আরওএএএআরের প্রতিষ্ঠাতা এলিসন বেস্কারভিল। সিপিজেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিয়োগের আগে সব নারীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জোর আহ্বান জানান তিনি।