শিকড়সন্ধানী স্থপতিদের প্রদর্শনী

তাসনুভা সারওয়াত হাফিজ, নন্দিনী আউয়াল ও মেহনাজ তাবাসসুম।  ছবি: প্রথম আলো
তাসনুভা সারওয়াত হাফিজ, নন্দিনী আউয়াল ও মেহনাজ তাবাসসুম। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যকলায় ভর্তির পর থেকে ইচ্ছা ছিল নিজের শহর নিয়ে একটা কিছু করবেন। এর অংশ হিসেবেই বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভবনগুলোর স্থাপত্যশৈলী নিয়ে খোঁজের শুরু। দুই বছর পর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যকলা বিভাগের শিক্ষক নন্দিনী আউয়াল হাজির হয়েছেন সেই খোঁজের ফলাফল নিয়ে। তারই প্রদর্শনী চলছে রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

 নন্দিনী আউয়ালের সঙ্গে পরে যুক্ত হন এ বিভাগেই তাঁর অপর দুই সহকর্মী মেহনাজ তাবাসসুম ও তাসনুভা সারওয়াত হাফিজ। তাঁদের যৌথ প্রযোজনার নাম ‘আর্কিটেকচার ইন ময়মনসিং’। ১১ নভেম্বর থেকে শুরু এই প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে আজ রোববার। তাঁরা কাজ করেছেন ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুরের ১৫টি ভবনের ওপর। এই ১৫টি ভবনের ছবি নিজে এঁকেছেন নন্দিনী আউয়াল।

ভবনগুলোর  মধ্যে সুলতানি আমলে গড়া শেরপুরের ঘাগরা লস্কর বাড়ি মসজিদ আছে, আছে ইউরোপীয় রীতিতে গড়া মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি, শশী লজ, আলেকজান্ডার ক্যাসেল, গৌরীপুর লজ, আনন্দময়ী শিব ও কালীমন্দির, হাসান মনজিলসহ ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে গড়া স্কুল, হাসপাতাল ও সেতু। আধুনিক স্থাপত্যরীতিতে তৈরি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ভবনকেও তাঁরা গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করেন।

নন্দিনী আউয়াল বলেন, যে শহরে জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা তার আনাচকানাচে যে কতশত গল্প ছড়িয়ে আছে, তা জানার আনন্দ অপার। এর মধ্যে নিজের পৈতৃক ভিটার কাছে গফরগাঁও এর ‘মসজিদে সোবহানী’ বারবার দেখেছেন। প্রায় ১৭৫ বছর আগের মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যরীতির অনন্য নিদর্শন।  এখনো মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় আসেনি। 

স্থপতি ও শিক্ষকেরা ভবনগুলোর স্থাপত্যরীতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ভবনের পেছনে থাকা মানুষগুলোর জীবনযাপনের নানা দিকের সঙ্গেও পরিচিত হয়েছেন। তাঁরা মানচিত্র, ছবি, বই আর ভবনগুলোর প্রতিলিপি দিয়ে অনেক অজানা তথ্য জানানোর চেষ্টা করেছেন।

প্রদর্শনীতে ময়মনসিংহ শহরের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৮৮৭ সালের ১ মে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ময়মনসিংহ জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়। তার আগ পর্যন্ত এ অঞ্চলের নাম ছিল নাসিরাবাদ। একটা সময় এই অঞ্চলে ৩৯টি পরগনা ছিল। পরগনাগুলোর মধ্যে মোমেনশাহী, নসরতশাহী ও আলাপশাহী ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ময়মনসিংহের জমিদার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ভঙ্গিতে তোলা ছবি। তাঁরা কখনো বন্য প্রাণী শিকার করে বীরের বেশে দাঁড়িয়ে কিংবা হাতির পিঠে বসে, লনের চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে এসব ছবি তুলেছেন। মুক্তাগাছার জমিদার বাড়ি (১৭৩৪, সংস্কার ১৭৬৯ সালের ভূমিকম্পের পর) ও শশী লজের (১৮৭৭, সংস্কার ১৯০৫-১১) বাসিন্দাদের ছবি স্থান পেয়েছে এখানে।

 কাজটি করতে কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নে নন্দিনী আউয়াল বলেন, আচার্য চৌধুরীদের লেখা বইপুস্তকগুলো খুঁজে পেতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েও কেউ কেউ বই ও তথ্য দেননি। এটুকু ছাড়া কাজটা কঠিন হলেও সামলে নিয়েছেন।

 নন্দিনী ও মেহনাজ তাবাসসুমের বাড়ি এ অঞ্চলে হলেও তাসনুভা সারওয়াত হাফিজ অন্য অঞ্চলের। পড়ালেখাও করেছেন বোস্টনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনিও আগাগোড়া উপভোগ করেছেন এ কাজের। এই তিন নারী বলেছেন, প্রত্যেকেই উদ্যোগী হলে নিজ শহরের এমন ছবি তুলে ধরতে পারেন দেশবাসীর কাছে।