সাজগোজের খুঁটিনাটি শেখান তাঁরা

ম্যাব্যাবের সদস্যরা।  ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
ম্যাব্যাবের সদস্যরা। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

গল্পটা সবার প্রায় একই। পরিবার ও বাচ্চাকে সময় দিয়ে চাকরি করাটা আর হয়ে ওঠে না। কেউ চাকরি করলে তাও ছেড়েছেন। কিন্তু কিছু করার ইচ্ছাটা ছিল সব সময়। নিজে সাজতে, অন্যকে সাজাতে ও সাজানোর বিষয় বরাবরই তাঁদের পছন্দ ছিল। এখন তাঁরা একেকজন রূপবিশেষজ্ঞ। নিজেরা শিখছেন, পাশাপাশি অন্যদের শেখাচ্ছেন। তাঁরা অনলাইনভিত্তিক মেকআপ আর্টিস্টদের প্রতিষ্ঠান ম্যাব্যাবের রূপবিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাচ্চাদের দেখাশোনা করার কারণে মূলত শাহিদা আহসান স্বামীর প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। আঁকাআঁকি ও সাজগোজের প্রতি নেশা ছিল তাঁর। নিজে নিজে মেকআপ করে ফেসবুকে শেয়ার করতেন।

শাহিদা বললেন, তাঁর স্বামীই একদিন পরামর্শ দিলেন মেকআপ নিয়ে ভিন্ন কিছু করার। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ম্যাব্যাব (মেকআপ আর্টিস্ট অ্যান্ড বিউটি ব্লগারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)। এখন শাহিদা এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পুরোদস্তুর বিউটিশিয়ান ও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।

শাহিদার গড়া ম্যাব্যাবের সদস্যসংখ্যা ৯। অন্যরা হলেন সহসভাপতি সিলভী মাহমুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানিয়া তারিক, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক নম্রতা খান, কোষাধ্যক্ষ লিয়া নাজ, সদস্য নাদিয়া আফরোজ, সোনিয়া খান, ফারজানা রিমা ও সানিয়া বৃষ্টি। ম্যাব্যাবের এ সদস্যরাই অন্য মেকআপ আর্টিস্ট, বিউটি ব্লগারস এবং বিউটি সেলুনের স্বত্বাধিকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

সাজগোজ পছন্দ করা ও একে পেশা হিসেবে নেওয়া এ নারীরা এক হয়ে অনলাইনভিত্তিক সৌন্দর্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ম্যাব্যাবে কাজ করছেন। ফেসবুকে ম্যাব্যাবের পেজ থেকে ওয়ার্কশপের ঘোষণা দেওয়া হয়। আগ্রহী ব্যক্তিরা রেজিস্ট্রেশন করলে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তিন থেকে চার মাস অন্তর এক থেকে তিন দিনব্যাপী এ ওয়ার্কশপ হয়। এতে অংশগ্রহণকারীকে ৭ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। ওয়ার্কশপের পাশাপাশি ম্যাব্যাব ব্রাইডাল ফেস্টিভ্যাল আয়োজন ও মেকআপপণ্যের ভালো-মন্দ নিয়ে জানিয়ে থাকে।

চলতি বছরের শুরুতে ডেমরার লামিয়া হোসাইন ম্যাব্যাবের প্রশিক্ষণ নেন। ছয় মাস আগে ডেমরার সারুলিয়াতে নিজেই একটি বিউটি সেলুন দেন। তাঁর অধীনে বর্তমানে চারজন কাজ করছেন।

ম্যাব্যাবের সভাপতি শাহিদা আহসান বললেন, ‘আমরা মেকআপ আর্টিস্ট তৈরি করছি। আমাদের মোটিভ হচ্ছে ন্যাচারাল লিকুইড বেইজড মেকআপ। গতানুগতিক ধারা থেকে বের হয়ে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা। প্রোডাক্ট রিভিউয়ের জন্য ব্লগার রয়েছেন আমাদের গ্রুপে। ওয়ার্কশপে দেশের বাইরের প্রশিক্ষকও আনিয়ে থাকি।’ তিনি জানান, মেকআপের বিষয়ে তিনি দেশের বাইরে থেকে একাধিক কোর্স করেছেন। এ ছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন সদস্যও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। 

ম্যাব্যাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তানিয়া তারিক দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। অন্তঃসত্ত্বা হলে চাকরি ছেড়ে দেন। নিজের সাজগোজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে পারিবারিকভাবে একটি বিউটি সেলুনের অংশীদার হন।

শাহিদা আহসান ম্যাব্যাবকে প্রতিষ্ঠিত একটি ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তিনি বলেন, ‘মেকআপকে আমরা বিশেষায়িত শিক্ষার একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই। আমাদের দেশে সেটা নেই। আমরা চাই সেটা ম্যাবেবের মাধ্যমে হয়ে উঠবে।’

এই দলের সদস্যদের অনেকের বাসায় স্টুডিও আছে, অনেকে পুরোপুরি ফ্রিল্যান্স মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।