যে ছবি ছড়িয়ে গেল

হেলালের হাতে আঁকা সদরঘাটের চিত্র
হেলালের হাতে আঁকা সদরঘাটের চিত্র

কয়েক দিন ধরে ফেসবুকের নিউজফিডে বারবার চোখে পড়ছিল একটি ছবি। পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজারের নিত্যদিনের চিত্র। দেখে মনে হয়, এ তো খুব সাধারণ দৃশ্য। ক্যাপশন পড়ে বিস্ময় জাগে। ছবিটা যে কোনো আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় তোলা নয়। তেলরঙে, হাতে আঁকা। ক্যাপশন পড়ে দ্বিতীয়বার তাকাতে হয় ছবির দিকে। পোস্টার, ব্যানার, তারের জঞ্জাল, ঘিঞ্জি ভবনের ফাঁক গলে আলো–ছায়ার খেলা—সব মিলিয়ে বুঝতে একটু সময় লাগে, সত্যিই এটি হাতে আঁকা এক ছবি!

ভাইরাল হওয়া ছবিটি এঁকেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের শিক্ষার্থী হেলাল শাহ। সম্প্রতি স্নাতক শেষ করেছেন তিনি। বিভাগ থেকে প্রতিবছর আঁকা ও প্রদর্শনী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ বছর তেলরঙে শ্রেষ্ঠ মাধ্যম পুরস্কার পেয়েছে হেলাল শাহের আঁকা শাঁখারী বাজারের ছবিটি। এই ছবি আঁকতে হেলালের লেগেছিল ১৮ দিন। এমন নয় যে একটা ছবি দেখলাম আর সেটা দেখে দেখে হুবহু এঁকে ফেললাম। হেলাল শাহ প্রথমে শাঁখারী বাজারে গিয়ে ঘুরে ঘুরে ছবি তুলেছেন। সেটাও এক দিনের কাজ ছিল না। সপ্তাহখানেকের চেষ্টায় তিনি ছবিতে যে আবেশটা চাচ্ছিলেন, সেটা পেয়েছেন। তারপর আবার সেটি দেখে হাতে এঁকেছেন।

পুরস্কার পাওয়ার পর ছবিটা ফেসবুকে আপলোড করতেই মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। হেলাল শাহ বলছিলেন, ‘আসলে আমি বুঝতেই পারিনি এ রকম কিছু হবে। ফেসবুকে আপলোড করলাম। কিছুক্ষণ পর ঢুকে দেখি নিউজফিড ছেয়ে গেছে এই ছবিতে।’ লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের সংখ্যা দেখলেই এ কথার প্রমাণ মেলে।

হেলাল শাহের আঁকা শাঁখারী বাজারের এই তেলচিত্রটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে
হেলাল শাহের আঁকা শাঁখারী বাজারের এই তেলচিত্রটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে

মজার ব্যাপার হলো, প্রথম দিকে হেলালকে প্রমাণ দেখাতে হয়েছে যে এটা আসলেই হাতে আঁকা ছবি! হাসতে হাসতে হেলাল বলছিলেন, ‘সে কথা আর বলবেন না! ছবিটা আঁকার সময়ের কিছু ছবি দিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে এটা আসলে হাতে আঁকা ছবি। বিশ্বাস করে না। লোকে বলে লাইক পাওয়ার ধান্দা! এখন অবশ্য কেউ আর অবিশ্বাস করছে না। থ্যাংকস গড!’ হেলাল শাহের হাসি এ কান-ও কান হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র হেলাল শাহ। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্র হেলাল শাহ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সপ্তম হয়েছিলেন তিনি। এই তথ্য দেওয়ার সময় বললেন, ‘ভাববেন না যেন আবার আমার ছোটবেলা থেকে খুব বড় শিল্পী হওয়ার ইচ্ছা ছিল। ভালো লাগত। আঁকতাম।’ ভালো লাগার কাজটাই তাঁকে স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। রাজশাহীর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র ছিলেন হেলাল। বড় ভাই দুলাল হোসাইন শাহ তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থী। হেলালের আকাঁআঁকিতে আসার অনুপ্রেরণা মূলত তাঁর বড় ভাই। বড় ভাই রংবেরঙের খাতা কিনে দিতেন। সেখানে চলত মনের মাধুরী মিশিয়ে আঁকিবুঁকি। হেলাল উচ্চমাধ্যমিক পাস করলেন। সপ্তম স্থান নিয়ে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতক শেষে তিনি এখন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম।

আমির উদ্দিন শাহ ও জাহানারা বেগমের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান হেলালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জীবনটাও ছিল মজার। বাংলা বর্ণমালা লিখে নিয়ে যাওয়ার বাড়ির কাজ দিতেন শিক্ষকেরা। তিনি এঁকে নিয়ে যেতেন হাতি, ঘোড়া, বাঘ, ভালুকের ছবি! সেখান থেকে তিনি আজ শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পাওয়া শিল্পী।

ছবি আঁকা ছিল তাঁর ভালো লাগা। এই ভালো লাগাকে পুঁজি করে একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে ছবি এঁকে যেতে চান তিনি।