নামের আগে যখন 'বিধবা'

স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে নাসিমা আক্তার।  ছবি সংগৃহীত
স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে নাসিমা আক্তার। ছবি সংগৃহীত

যাঁরা এত দিন ‘আপনি’ সম্বোধন করতেন, তাঁরা কোনো ধরনের অনুমতির তোয়াক্কা না করে ‘তুমি’তে নেমে এসেছেন। অনেকেই টেলিফোন করে বলছেন, যত রাতই হোক, ফোন দিলেই চলে আসবেন। অনেকে ফোন করে বাজে ইঙ্গিত দিচ্ছেন। আর ঘটনাগুলো ঘটেছে ফয়সাল আহমেদ শিকদার মারা যাওয়ার এক মাস হওয়ার আগেই।

কথাগুলো বললেন নাসিমা আক্তার নিশা। তিনি উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্সের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বললেন, ‘নামের আগে শুধু বিধবা কথাটি যোগ হয়েছে, এতে করেই লোকজন আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছেন। বাজে ইঙ্গিত দিতে সাহস করছেন। আমার নিজস্ব একটা পরিচিতি আছে, সমাজে কিছুটা হলেও আমার একটি গ্রহণযোগ্যতা আছে। তারপরও আমার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করতেও লোকজন দ্বিধা করছে না। এই সমাজে যে নারীর তেমন কোনো পরিচিতি বা অবস্থান নেই, সেই নারীর বেলায় কী ঘটে, তা সহজেই বুঝতে পারছি।’

সম্প্রতি নাসিমা আক্তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। প্রথম আলোর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।গত ১ নভেম্বর একেবারেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যান স্বামী ফয়সাল আহমেদ।

নাসিমা জানালেন, ২০০৬ সাল থেকে তিনি ব্যবসা উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রথমে বাবার ব্যবসা দেখতেন। ২০১০ সাল থেকে নিজের ব্যবসা উদ্যোগ রেভারি করপোরেশন সফটওয়্যার কোম্পানি চালু করেন।

নাসিমা-ফয়সাল দম্পতির ১৬ বছরের সংসারজীবন ছিল। তাঁরা ২০০৩ সালে বিয়ে করেন। তবে তাঁদের পরিচয় ছিল ১৯৯৫ সাল থেকে। তাঁদের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর চেয়েও ছিল বন্ধুর মতো। এই দম্পতির একমাত্র ছেলের বয়স মাত্র আট বছর হবে ডিসেম্বরে।

নাসিমা বললেন, ‘স্বামী ছিলেন বন্ধুর মতো। সব কথা খুলে বলতে পারতাম। টেলিফোনে কেউ বিরক্ত করলে বা বাজে কথা বললে তা স্বামীকে বলতাম। কয়েক দিন আগে টেলিফোনে একজন বারবার বিরক্ত করতে থাকলে আর সহ্য করতে না পেরে তা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিই। আর অন্যদের সতর্ক করার জন্যও স্ট্যাটাসটি দিই। আমার স্বামী মারা গেছেন বলে আমার সঙ্গে যা খুশি তা করা যাবে না, তা অন্যদের বুঝতে হবে। এরপরও কেউ বেশি বাড়াবাড়ি করলে আইনের আশ্রয় নেব।’

নাসিমা বললেন, কাজের প্রয়োজনে নারীরা ঘর থেকে বাইরে বের হলেই অনেক পুরুষ সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকেন। আর এখন সামনে কঠিন সময় পার করতে হবে, তা একঝটকায় বুঝতে পেরেছেন। ৯০ বছরের বেশি বয়সী শ্বশুর সব সময়ই বাবার মতো পাশে থেকেছেন। এই সময়ও নাসিমা শ্বশুর এবং শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যদের কাছ থেকে সার্বিক সহায়তা পাচ্ছেন বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন।