খেলার জন্যই মেয়েটি এখন বাহবা পাচ্ছে

মায়ের সঙ্গে রিতু খানম।  ছবি: প্রথম আলো
মায়ের সঙ্গে রিতু খানম। ছবি: প্রথম আলো

মেয়ে এমনকি ছেলেদের সঙ্গেও নানান খেলাধুলায় মেতে থাকেন। এতে নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় মেয়েটির বিয়ের আয়োজন করে পরিবার। তবে মেয়েটি পরিবারকে বুঝিয়ে বাল্যবিবাহ ঠেকিয়েছেন। একই সঙ্গে খেলাধুলাও থামেনি তাঁর। বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তিনি প্রথম সারিতেই থাকেন।

মেয়েটির নাম রিতু খানম। বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায়। ফুটবল, কাবাডি, হ্যান্ডবল, হকি, রাগবি, অ্যাথলেটিকস—সব খেলাতেই তিনি সমান পারদর্শী। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত উইমেন্স জুনিয়র (অনূর্ধ্ব-২১) এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেন মেয়েটি। তিনি এখন এলাকার মানুষের কাছে চোখের মণি।

 পরিবারে রিতুর বাবা রফিকুল ইসলাম, মা শাহানাজ পারভীন, এক ভাই ও ছোট বোন আছে। রিতু লোহাগড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন ক্রীড়া শিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই শিক্ষকের অনুপ্রেরণাতেই রিতু জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিতে পারছেন।

খেলাধুলা করার জন্য পরিবারসহ সবাই মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছেন। হকি খেলার পোশাক নিয়েও কথা শুনতে হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। প্রায় সবাই খেলার জন্যই বাহবা দিচ্ছেন।

 রিতু জানালেন, হকি নারী দলের অধিনায়কত্ব করার আগে ২০১৭ সালে নেপালে কিকভলি খেলতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তখন অনেকেই চমকে গিয়েছিলেন। তখন অনেকেই বুঝতে পারেন খেলার জগৎটা শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।

রিতুর মা শাহানাজ পারভীন বললেন, ‘মেয়ে খেলবে তাতে আমাদের সমর্থন থাকলেও লোকজনের কথায় তা সহ্য করার উপায় থাকত না। মেয়ে বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে এবং মাঠে খেলাধুলা করতে যায়, এটাই ছিল অপরাধ। এখন সবাই আমার মেয়েকে নিয়ে গর্ব করেন।’

শিক্ষক দিলীপ চক্রবর্তী বললেন, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় অ্যাথলেটের মাধ্যমে রিতুর হাতে খড়ি। অনেক পুরস্কার পেয়েছে সে।

লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হায়াতুজ্জামান রিতুকে স্কুলের গর্ব হিসেবেই উল্লেখ করলেন। বাংলাদেশ জাতীয় নারী হকি দলের প্রধান কোচ (প্রশিক্ষক) মো. তারিকুজ্জামান বলেন, ‘তৃণমূল থেকে উঠে আসা একটি মেয়ে জাতীয় দলের নেতৃত্ব দেবে, এটা কম গর্বের কথা নয়। রিতু অনেক উচ্চ মানের হকি খেলোয়াড়।’