গামছাশাড়ি মন কাড়ছে বিদেশি নারীদেরও

নিজের বানানো গামছাশাড়িতে সাবিহা আখতার।  ছবি: আবদুস সালাম-(4)
নিজের বানানো গামছাশাড়িতে সাবিহা আখতার। ছবি: আবদুস সালাম-(4)

শাড়ি, ওড়না, পাঞ্জাবি, ব্লাউজ, গজ কাপড়, গয়না, টেবিল রানার, পটারির ঢাকনা, কুশনকভার—সবই বানানো হচ্ছে গামছা দিয়ে। নিজের ও ঘরের সাজসজ্জায় গামছাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন সাবিহা আখতার। শুধু তা–ই নয়, সাবিহার ‘শাড়ি কথন’–এর গামছাশাড়ি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে। পয়লা বৈশাখসহ বিভিন্ন দিবসে ঘটা করে গামছাশাড়ি পরছেন সে দেশগুলোয় বসবাসকারী বাঙালি নারীরা। এমনকি বিদেশি নারীরাও আগ্রহ নিয়ে কিনছেন বা তাঁদের গামছাশাড়ি উপহার দেওয়ার পর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

ইন্টেরিয়র ডিজাইনার বা অন্দরসজ্জাবিদ সাবিহা আখতার তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে ১৫ থেকে ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বাজার ডিপ্লোমেটিকো-২০১৯–এর বাংলাদেশি প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত হয়েছে আমার নকশা করা গামছা ওড়না...বাংলাদেশি প্যাভেলিয়নে আগত অতিথিবৃন্দ খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছেন আমার প্রোডাকশন...পর্তুগালে নিযুক্ত মাননীয় রাষ্ট্রদূত মহোদয় এবং তাঁর স্ত্রী পর্তুগালের ফার্স্ট লেডিকে (১৯৭৮–এর অভ্যুত্থানের পর পর্তুগালের প্রথম প্রেসিডেন্টের স্ত্রী) আমার এই ওড়না উপহার দেন এবং তিনি সেটা পরে ক্যামেরায় পোজ দেন...অসম্ভব ভালো লাগার একটি ছবি...।’

সাবিহা জানান, গামছার প্রতি ভালোবাসা ছিল। ‘শাড়ি কথন’ শুরু হয় ২০১৫ সালে। এক বছরের মাথায় এতে গামছাশাড়ি যুক্ত হয়। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গামছার তাঁতিদের দিয়েই গামছাশাড়িগুলো বানানো হচ্ছে। ডিজাইন করে দিচ্ছেন সাবিহা। গামছার জমিনে হ্যান্ডপেইন্ট করা হচ্ছে। গামছার সঙ্গে ব্লকপ্রিন্ট, খাদির মিশ্রণসহ বিভিন্নভাবে নতুনত্ব আনা হচ্ছে। এই শাড়িগুলো কোনোভাবেই গামছা মোটিভ বা প্রিন্ট নয়। বাঙালিরা যে গামছা ব্যবহার করেন, সেই গামছাকেই শাড়ি বানানো হচ্ছে। বর্তমানে ১০ থেকে ১২ জন তাঁতি কাজ করেন। মূলত, অনলাইনেই শাড়িগুলো বিক্রি হচ্ছে।

সাবিহা বলেন, ‘২০০৩ সালের দিকে প্রবর্তনায় গামছাশাড়ি দেখে বোনের জন্য কিনেছিলাম। ভালো লাগার শুরুটাও তখনই তীব্র হয়। বিবি রাসেল ফ্যাশনে গামছাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করিয়েছেন। আমি আমার মতো করে গামছাশাড়ি নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চাই। গামছা খুব জনপ্রিয় হয়ে গেছে, ব্যাপারটা তেমন না। তবে ফ্যাশনসচেতন নারীরা আস্তে আস্তে এ শাড়ির দিকে ঝুঁকছেন।’

সাবিহা আখতার নিজেও গামছাশাড়ি, গামছা কাপড়ে বানানো টিপ, চুড়ি ও মালা পরে কথা বলছিলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমার একটু পরিচিতিও বেড়েছে। কোথাও গেলে অনেকেই বলেন, আপনাকে তো চিনি, আপনি গামছাশাড়ি বানান। আমি চাই গামছা দিয়েই সিগনেচার শাড়ি বানাব, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সমান জনপ্রিয় হবে। আর বিষয়টি পেশার চেয়েও শখে করছি। ব্যবসায় লাভ করার মতো পরিস্থিতি আসেনি এখনো।’

সাবিহা জানান, যে তাঁতিরা শাড়িগুলো বানাচ্ছেন, তাঁরা আগে শুধু গামছা বানাতেন। তাই তাঁদের ডিজাইন বা নকশা বুঝতে খানিকটা সময় বেশি লাগে। তবে তাঁতিরাও আনন্দ নিয়েই কাজটা করছেন। একটি প্যাটার্নে ন্যূনতম ২০ থেকে ২২টি শাড়ি বানানো হচ্ছে। এ কারণে খরচটাও বেড়ে যাচ্ছে।