তাসনুতা কেকেই আঁকেন বাংলাদেশের ছবি

তাসনুতা আলমের কেকে বাংলাদেশের পান–সুপারি।  ছবি: সংগৃহীত
তাসনুতা আলমের কেকে বাংলাদেশের পান–সুপারি। ছবি: সংগৃহীত

তাসনুতা আলমের কেক বানানোর শুরু শখ থেকে, মা কাওসার আলমের পাশে দাঁড়িয়ে কেক বানানো দেখে দেখে। আর এখন যুক্তরাজ্যে কেক নিয়েই তাঁর কারবার। তিনি এখন কেক আর্টিস্ট। ভারতের আয়োজনে কেক নিয়ে অনলাইনে একটি গ্লোবাল প্রতিযোগিতায় অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিচারকদের সঙ্গে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কেক ইন্টারন্যাশনাল থেকে কেকের জন্য প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনবার স্বর্ণপদক পেয়েছেন। সব থেকে বড় কথা, এই কেকের মধ্যেই তিনি বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন বিশ্বদরবারে। বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন কেকের মাধ্যমেই।

যুক্তরাজ্যের আবেরডিন শহরে তাসনুতার কেকের সুনাম আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেক আর্টিস্টরাও এখন তাসনুতার নাম ও বাংলাদেশকে চেনেন। একমাত্র ছেলের জন্মের পর বাইরের চাকরি ছেড়ে কেক বানিয়েই আয় করছেন তিনি। কেক বানানো–সংক্রান্ত প্রফেশনাল ডিপ্লোমা করেছেন এবং অন্যান্য পড়াশোনা অব্যাহত রেখেছেন। অনলাইনে কেক ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের কেক বানানোর কলাকৌশলও শেখাচ্ছেন তিনি। এখন তাঁর আরেকটি পরিচয় ব্রিটিশ কোয়ালিফাইড ইনস্ট্রাক্টর উইথ মাস্টার্স অব কেক ডেকোরেটিং হিসেবে।

টেলিফোনে ‘ম্যাগনিফিসেন্ট বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কেক কোলাবোরেশন’–এর উদ্যোক্তা তাসনুতা জানান, বিজয়ের মাসে এই কেক কোলাবোরেশনটি করার উদ্দেশ্যই হলো বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরা। এতে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর ২৬টি দেশের ৭৭টি কেক স্থান পেয়েছে। কোলাবোরেশনটিতে তিনি নিজেসহ ১৭ জন বাংলাদেশি অংশ নেন। তাসনুতা নিজে কোলাবোরেশনে কেকের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবয়ব তুলে ধরেছেন। এর পাশাপাশি মিষ্টি পান, সুপারিসহ পানের নানা সরঞ্জাম তৈরি করেছেন।

তাসনুতা আলম।  ছবি: সংগৃহীত
তাসনুতা আলম। ছবি: সংগৃহীত

তাসনুতা জানান, বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশ মানেই পানিতে প্রায় ডুবে আছে এমন শিশুসহ নেতিবাচক চিত্রই বেশি পরিচিত। তবে ‘ম্যাগনিফিসেন্ট বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কেক কোলাবোরেশন’–এ বিদেশি কেক আর্টিস্টরা স্মৃতিসৌধ, শাপলা, দোয়েল, শহীদ মিনার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মেহেদি, ইলিশ, পাপেট শো, মসজিদ, বিয়ের বর-কনে, পালকিসহ নানা জিনিসের অবয়ব বানিয়ে তুলে ধরেছেন ভিন্ন এক বাংলাদেশকে। তাঁরা শুধু কেক বানাননি, বাংলাদেশের কোন জিনিসটি বানিয়েছেন, কেন বানিয়েছেন, তার বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়েছেন।

তাসনুতার পড়াশোনা এবং বড় হওয়া সব ঢাকাতেই। ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতেন। স্বপ্ন দেখতেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হবেন। অ্যাকাউন্টিং নিয়ে পড়াশোনাও করেন। তবে বিয়ের পর পুরোপুরিভাবে ২০০৯ সাল থেকে ইঞ্জিনিয়ার স্বামী আহমেদ সাদিকের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে থিতু হন। ২০১৩ সালে বিজনেস পেজ কেক টোপার্জ খোলেন। তাসনুতা ২০১৭ সাল থেকে ৩৫টির মতো বিভিন্ন দেশের কেক কোলাবোরেশনে অংশগ্রহণ করেছেন।

তাসনুতা বললেন, বাংলাদেশে এখন অনেক নারী কেক আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু দেশে কোনো কেক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে ওঠেনি। তাই দেশে একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে। আর এ ধরনের ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠলেই কেক আর্টিস্টরা বেকার নন, আর্টিস্ট হিসেবেই পরিচিতি পাবেন।