মরিয়মের 'ইসমাইল ইলেকট্রনিকস'

নারায়ণগঞ্জের মুসাপুর গ্রামের শেষ প্রান্তে একদম খেতের ওপর পাঁচ শতাংশ জায়গার ওপর ছোট বাড়ির দোতলায় ব্যানার টানানো, ‘ইসমাইল ইলেকট্রনিকস একটি নারীবান্ধব ইলেকট্রনিকস কর্মসংস্থান’। ছোট এই কারখানার উদ্যোক্তা মরিয়ম আক্তার। তাঁর কারখানার নয়জন কর্মীর সবাই নারী। এ কারখানা ছাড়া নবাবপুরে মরিয়মের আছে নিজস্ব শোরুম।

ইসমাইল ইলেকট্রনিকস প্রিন্টের সার্কিট বোর্ড, আইপিএস, অ্যামপ্লিফায়ার সেট, সাউন্ড সিস্টেম এবং সব ধরনের এলইডি লাইট বানাচ্ছে।

 নিজের কারখানায় বসে মরিয়ম জানালেন, তাঁরা পাঁচ বোন চার ভাই। বাবা ছিলেন বেকারি ব্যবসায়ী। অভাবের সংসারে কম বয়সেই বিয়ে হয়ে যায় বোনদের, তবে সবচেয়ে ছোট বলে টিকে যান মরিয়ম।

প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া মরিয়ম একদিন বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকার মিরপুরে ইউসেপের একটি স্কুলে মিনা কার্টুন দেখতে গিয়েছিলেন। এই স্কুলে পড়ার খরচ নেই, খাবার দেওয়া হয় এবং শেখানো হয় হাতের কাজ। সেখানেই মরিয়ম শুরু করেন লেখাপড়া।

১৯৯৬ সালে মরিয়ম চাকরি পান ন্যাশনাল টিভি কোম্পানিতে। বয়স তখন মাত্র ১৪ বছর। পরে একই প্রতিষ্ঠানের মনিরকে মরিয়ম বিয়ে করেন। বিয়ের পর সেই একই গল্প। চাকরি ছেড়ে সংসারে থিতু হওয়া। দুই বছর পর মরিয়মের ছেলে জন্মায়, নাম ইসমাইল। সংসারে খরচ বাড়ায় ঘরে বসেই সার্কিটের কাজ শুরু করেন মরিয়ম। কাজের সূত্রে পরিচয় হওয়া এক বড় ভাই কামাল ভারত থেকে ডিক সার্কিট নামে একটি সার্কিট আনতেন। কামালের পরামর্শে সার্কিট বানানো শুরু করেন। ‘গাড়ির হেডলাইট জ্বালানোর সেই সার্কিট যেদিন বানিয়ে ফেললাম, সেদিন সে কী আনন্দ, এই সার্কিটই আমাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়,’ বললেন মরিয়ম।

কারখানায় এক কর্মীকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন মরিয়ম আক্তার (দাঁড়ানো)।  ছবি: দিনার মাহমুদ
কারখানায় এক কর্মীকে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন মরিয়ম আক্তার (দাঁড়ানো)। ছবি: দিনার মাহমুদ

কাজের পরিমাণ বাড়তে থাকলে স্বামীর সঙ্গে দোকানেই কাজ শুরু করেন মরিয়ম। লোকে নানান কথা বলায় একটা পর্দা দিয়ে শুধু নিজেকে আড়াল করে নেন। ছেলেকে কাজের জায়গায় নিয়েই কাজ করতেন, ছেলেকে পড়াতেন।

আস্তে আস্তে মুসাপুর বাজারে একটি দোকান নিয়ে মরিয়ম ১১ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু করেন কাজ। জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় মরিয়ম পান ব্যাংকঋণ।জমি কিনে শুরু করেন কাজ। সম্প্রতি মরিয়ম সিটি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পেয়েছেন সেরা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার।

যে ধরনের সার্কিট মরিয়ম তৈরি করেন, বাজারে তার চাহিদা রয়েছে। মরিয়ম চান, আরও উচ্চতর প্রশিক্ষণ; সঙ্গে কিছু মূলধন। এই দুই হলেই মরিয়ম আরও কয়েক শ নারীর কর্মসংস্থান করতে পারবেন, এমনই আশা তাঁর।