ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ: সালমা আলী

সালমা আলী
সালমা আলী

এই সমাজে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারীকে প্রায়ই অভিযুক্ত ব্যক্তির কাতারে ফেলা হয়। তার চরিত্র কেমন, সম্মতি ছিল কি না, আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় সে ইচ্ছাকৃতভাবে আসামির সঙ্গে সম্পর্ক করেছে কি না, তার পোশাকটি যৌন উত্তেজক ছিল কি না প্রভৃতি বিষয় আলোচনার টেবিলে জায়গা পায়। অন্যদিকে ভুক্তভোগীকেই প্রমাণ করতে হয় যে সে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। একটা ধর্ষণের মামলায় ভুক্তভোগী যদি বেঁচে থাকে, তবে তার এবং তার পরিবারকে মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে হতে হয় হয়রানির শিকার। এই পরিস্থিতি পাল্টাতে হবে। 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজধানীতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরও নানান আলোচনা হচ্ছে। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (যখন চিকিৎসাধীন ছিলেন) গিয়ে মেয়েটির যে সাহসী মনোভাব দেখেছি, তা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। মেয়েটির পরিবারের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী, শিক্ষক, হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সবাই ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন মেয়েটির প্রতি। এটাই সবার বেলায় হতে হবে।

এবার আসি আইনের প্রসঙ্গে। দেশে নারী ও শিশুবান্ধব আইনগত সহায়তা ও সুরক্ষায় বিভিন্ন সময়ে নীতিমালা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ধর্ষণের মামলায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি আদালত যে ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছেন তাতে নারী ও শিশু আইনের নির্ধারিত ১৮০ দিনে মামলাটি শেষ করতে হবে বলে উল্লেখ করেছেন। ভুক্তভোগীর নিরাপত্তায় তদারকি কমিটি গঠন ও কমিটির জবাবদিহির ব্যবস্থা করার কথাসহ বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে বিভিন্ন আইন ও নির্দেশনার সমন্বয়ে একটি সমন্বিত দিকনির্দেশনা প্রণয়ন এবং প্রয়োগ দরকার।

 আমরা চাই মামলার দীর্ঘসূত্রতার অবসান ঘটিয়ে বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর মামলাগুলো দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করা হোক। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইনের একটি খসড়া বহুদিন ধরে পড়ে আছে, আমরা চাই আইনটি দ্রুত হোক। 

নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দেশের প্রচলিত আইন অপ্রতুল, না আমরা ব্যর্থ হচ্ছি এই আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগে, বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। ধর্ষণের শিকার নারীকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের নারীবান্ধব সেবা এবং বিচারকদের মনমানসিকতার পরিবর্তনও জরুরি। তবে এটাও সত্যি, চিকিৎসক, পুলিশ এমনকি বিচারকগণও ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের চাপের মুখে থাকেন, বিষয়টি নজরদারির আওতায় আনতে হবে। ফরেনসিক ল্যাবগুলোকে যুগোপযোগী করা অত্যন্ত জরুরি। সাক্ষ্য আইনের মতো আইনগুলোকে যুগোপযোগী করারও সময় এসেছে।

আইন যতই থাকুক না কেন, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ। রিট নম্বর ৫৯১৬/২০০৮-এর পিটিশনার হিসেবে আমি মনে করি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে এই জনস্বার্থ মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনার যথাযথ প্রয়োগ করা জরুরি। যদি এখনো আমরা সবাই আইনের কার্যকর প্রয়োগে উদ্যোগী না হই, তাহলে হয়তোবা আমার এবং আপনার খুব কাছের কেউ ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে।

সালমা আলী, মানবাধিকার আইনজীবী