ইউবিসির কর্মশালায় অনন্য অভিজ্ঞতা

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় আয়োজিত একটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন তাহসীনা ও সাবাবা
কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় আয়োজিত একটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন তাহসীনা ও সাবাবা

‘এটা কি বাংলাদেশের পতাকা?’ প্রশ্ন শুনে চমকে গিয়েছিল ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী তাহসীনা মুস্তারী। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার (ইউবিসি) ডিজিটাল মিডিয়া একাডেমির কর্মশালার জন্য ‘আফটারনুন উইথ অবন্তী’ নামের একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছিল সে। জানিয়ে রাখি, তাহসীনা মুস্তারীর ডাকনামই অবন্তী। তো এই তথ্যচিত্র দেখে প্রশ্নটি করেছিলেন কোর্স ডিরেক্টর লুইক ম্যাকবেন। উত্তরে নবম শ্রেণির এই ছাত্রী মাথা উঁচু করে বলেছে, ‘হ্যাঁ, এটাই আমার দেশের পতাকা।’

তাহসীনা মুস্তারী ছাড়াও ডিজিটাল মিডিয়া একাডেমির এই কর্মশালায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেছিল সাবাবা আহমেদ। সে পাবনার বেড়া উপজেলার আল হেরা একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী। শুরুতে কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য সব দেশ থেকে স্কলারশিপ প্রোগ্রামের আওতায় আবেদন আহ্বান করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে সুযোগ পায় তাহসীনা ও সাবাবা। তারা দুজনই নিজেদের জায়গা থেকে প্রথম স্থান লাভ করে কর্মশালায়।

সাবাবা এর আগে কখনো বিদেশে যায়নি। কর্মশালায় অংশগ্রহণ করার সুবাদে এটিই ছিল তার প্রথম বিদেশযাত্রা। সাবাবা বলছিল, ‘আবেদন করার সময় আমি আগ্রহের জায়গায় রোবটিকস দিয়েছিলাম। যদিও এ সম্পর্কে আগে থেকে তেমন কিছু জানতাম না। তবে এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে রোবট কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে ধারণা পাই। আমার বিষয় ছিল “অটোনমাস আরডুইনো”। আগে থেকে ধারণা না থাকায় প্রজেক্টে কাজ করার সময় আমি বারবার আটকে যাচ্ছিলাম। আমার গ্রুপের অন্য সদস্য চার্লি ও থমাস আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করে সে সময়। আমাদের একটি রোবট ফাইটিং ছিল। সেখানে রোবট দিয়ে বেলুন ফাটাতে হয়েছে। আমাদের গ্রুপ সেখানে প্রথম হয়।’ কর্মশালায় অংশ নিয়ে শুধু যে কাজই করতে হয়েছে, তেমন কিন্তু নয়। মজাও হয়েছে প্রচুর। ‘ক্যাম্পিংয়ের সময় একদিন হঠাৎ করেই ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠে। আমরা যে অবস্থায় ছিলাম সেভাবে তাড়াহুড়া করে বাইরে মাঠের ভেতর চলে আসি। পরে জানতে পারি, কেউ একজন মজা করে ফায়ার অ্যালার্মটি বাজিয়েছিল,’ বলেন সাবাবা।

কথা হয় ডিজিটাল মিডিয়া একাডেমির কর্মশালায় অংশ নেওয়া অন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাহসীনা মুস্তারীর সঙ্গে। তাহসীনার বিষয় ছিল ‘ইন্ট্রো টু ফিল্মমেকিং’। পাঁচ দিনের এই প্রশিক্ষণে ‘আফটারনুন উইথ অবন্তী’ শিরোনামে একটি টক শো ধরনের প্রামাণ্যচিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখা, শুটিং, সম্পাদনা, সাউন্ড ডাবিং, পোস্টার বানানো থেকে শুরু করে সব রকম কাজ করতে হয়েছে তাহসীনাকে। সে বলছিল, ‘আমি বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে প্রামাণ্যচিত্রটির পোস্টার করে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরার চেষ্টা করি। এই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের আগে অবশ্য কোনো দিন মুভি ক্যামেরা চালাইনি।’

শুধু প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েই শেষ হয়নি তাহসীনার কাজ। তাকে টিভি চ্যানেলের জন্য সংবাদ বানানো শিখতে গিয়ে হতে হয়েছিল চিফ রিপোর্টার। তাহসীনা বলে, ‘কর্মশালার একটি সেশনে আউটডোর থেকে ক্লাসে ফিরে বলা হলো, টিম মেম্বাররা মিলে কোনো একটা সিনেমা বানাতে দিলে সেই সিনেমার নাম, চরিত্র ও সংক্ষেপে তার বিষয় বর্ণনা করে টিম লিডারকে বোর্ডে এসে লিখতে হবে। আধা ঘণ্টা আলোচনার পর আমি প্রথমে আমার দলের সঙ্গে আলোচনা করা সিনেমার নাম, চরিত্র ও সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ইংরেজিতে লিখি। এভাবে সবাই এক এক করে সবার ভাবনা বলে, আর আমি বোর্ডে লিখতে থাকি। কোর্স ডিরেক্টরের কাছে আমাদের সিনেমাটা বেশি পছন্দ হয়। সিনেমার বিষয় ছিল একটা দুষ্টু ছেলের দুষ্টুমি-কান্না-মারামারি ও বন্ধুতা নিয়ে।’

তাহসীনা ও সাবাবা—দুজনই যেহেতু কর্মশালায় খুব ভালো ফল পেয়েছে, তাই ওদের প্রত্যাশা, এ বছর থেকে বাংলাদেশিরা আরও বেশি সুযোগ পাবে। তাহসীনা বলছিল তার স্বপ্নের কথা, ‘বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ২০০ বছরের বেশি সময়ের গল্প নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক মানের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাই। ২০২১ সালে আমার মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হবে। এরপর আমি আমার জেলা ও দায়রা জজ বাবার লেখা সত্য ঘটনার গল্প “ওয়ান সিক্সটি ফোর” নিয়ে একটা টেলিছবি তৈরি করব।’ অন্যদিকে সাবাবা জানাল, গত বছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে উপজেলার সেরা শিক্ষার্থী হয়েছিল সে। ভবিষ্যতে গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করার স্বপ্ন তার।