ভুক্তভোগীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে

জাকিউর রহমান।  ছবি: সংগৃহীত
জাকিউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
>

বন্ধ্যত্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ (আইভিএফ স্পেশালিস্ট) চিকিৎসক জাকিউর রহমান। এই চিকিৎসকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. আরিফুজ্জামান।

প্রথম আলো: দেশের কত শতাংশ দম্পতি বন্ধ্যত্ব সমস্যায় ভুগছেন?

জাকিউর রহমান: দেশে সে রকম কোনো পরিসংখ্যান আছে কি না, আমার জানা নেই । তবে বৈশ্বিক পরিসংখ্যানে এটি ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ হতে পারে। তবে যাঁরা বন্ধ্যত্বে ভুগছেন, সবার কিন্তু চিকিৎসার দরকার নেই। প্রথমে রোগীর প্রয়োজন কাউন্সেলিং। অন্তত দুই বছর সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তার পরও ফল না পেলে তখন দেখতে হবে কোনো সমস্যা আছ কি না।

প্রথম আলো: বন্ধ্যত্বের মূল কারণ কী?

জাকিউর রহমান: শুধু নারী না, বন্ধ্যত্ব পুরুষেরও হতে পারে। বন্ধ্যত্বের পেছনে হরমোনজনিত কারণ মূলত দায়ী। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা, নারীদের দেরি করে বিয়ে করা, রাত জাগা, খাদ্যের সমবণ্টনের সমস্যা, খাদ্যর গুণগত মান, দেশের তাপমাত্রা, ধূমপান, জর্দা, অতিরিক্ত চা-কফি পান করাসহ বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। অনেক নারীর টিউব ব্লক থাকে, অনেকে জন্মগতভাবে কিছু সমস্যা নিয়ে বড় হন, এগুলোও বন্ধ্যত্বের কারণ হয়ে থাকে।

প্রথম আলো: দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা কেমন...

জাকিউর রহমান: দেশেও বন্ধ্যত্বের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে। সরকারি পর্যায়ে বন্ধ্যত্বের ভালো চিকিৎসা থাকলে খরচ অনেক কম হবে। তখন রোগীদের ভোগান্তির মাত্রাও কমে আসবে। অনেক রোগী ভারতে চলে যাচ্ছেন। কী কারণে দেশের মানুষ বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা নিতে ভারতে যাচ্ছেন, তার কারণ অনুসন্ধান করে বের করা দরকার।

প্রথম আলো: ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দেশের বেশির ভাগ চিকিৎসকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং সেবা বা ভালো ব্যবহার পাচ্ছেন না...

জাকিউর রহমান: ভুক্তভোগী দম্পতিরা কিন্তু পেটে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না। তাঁরা পারিবারিক, সামাজিক ও মানসিক ব্যথা নিয়ে যাচ্ছেন। শুধু এ সমস্যার কারণে অনেকের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। দম্পতিদের ব্যয়বহুল চিকিৎসাপ্রক্রিয়ার মধ্যে দিন পার করতে হয়। তাই তাঁদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে। এ ধরনের চিকিৎসায় রোগীর আস্থা অর্জন করা একটি বড় ব্যাপার। দেশে বিভিন্ন নামে বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় বেসরকারি সেন্টারে চিকিৎসক যা বলবেন, রোগীরা তা-ই বিশ্বাস করতে বাধ্য। অথচ সিঙ্গাপুরে রোগী যদি টেস্টটিউব পদ্ধতির আওতায় আসেন, তাঁর কাগজপত্র সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। উন্নত দেশে সেবার মান নিয়ন্ত্রণে প্রটোকল মেনে চলা হয়। দেশেও এ ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারি বাড়ানো জরুরি।

প্রথম আলো: বন্ধ্যত্ব নিয়ে সামাজিক ট্যাবু নিয়ে যদি কিছু বলেন...

জাকিউর রহমান: বন্ধ্যত্ব চিকিৎসায় সফল হতে পরিবারের সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সমস্যা কিন্তু রোগী না, সমস্যা হলো আত্মীয়স্বজন যেন না জানেন। তবে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে।

প্রথম আলো: ভুক্তভোগীদের জন্য পরামর্শ...

জাকিউর রহমান: দম্পতিদের প্রথম নিজেদের সচেতন হতে হবে। যেখানে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন, সে সম্পর্কে সব তথ্য জেনে যেতে হবে।