প্রবীণ নারীর কথা বলুন, প্লিজ...

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বর্তমান বিশ্বের সর্বজনব্যাপী অন্যতম সমস্যা হচ্ছে বার্ধক্য। বেঁচে থাকলে বার্ধক্যের হাত থেকে কারও মুক্তি নেই। তবে বার্ধক্যের লৈঙ্গিক বিবেচনায় পুরুষের তুলনায় প্রবীণ নারীর ভোগান্তি, অসহায়ত্ব এবং জটিলতা বহুমাত্রিক। বার্ধক্যের কথা কেউ বলে না, শোনে না, বোঝে না, মানে না—বিশেষ করে প্রবীণ নারীদের নিদারুণ কষ্টের কথা। দেশের নারী সংগঠনসমূহ এবং শিশু ও মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় পর্যন্ত প্রবীণ নারীর প্রাপ্য অধিকার, মর্যাদা, সেবা-পরিচর্যা, হিস্যা ইত্যাদি বিষয়ে যেন নিশ্চুপ!

 মায়ের সঙ্গে আমাদের নাড়ির টানের যোগাযোগ। জন্মের পরে শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, পারিবারিক সব ক্ষেত্রে তিল তিল করে তিনি আমাদের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন। সন্তানেরা ক্রমশ বড় হয় আর মা হতে থাকেন প্রবীণা! মায়ের ওপর সন্তানের আস্থা ধীরে ধীরে কমতে থাকে আর সন্তানের ওপর বাড়তে থাকে মায়ের নির্ভরতা। সন্তানেরা দিন দিন সবল থেকে সবলতর হয় আর মা হতে থাকেন দুর্বল, ক্ষমতাহীন, পরমুখাপেক্ষী। খেয়ালি প্রকৃতি আর আমাদের পুরুষবান্ধব সংস্কৃতি এই ধারাগুলোকে আরও ত্বরান্বিত করে অতি নির্মমভাবে!

প্রসবকালীন সুতীব্র বেদনা সহ্য করে নবজাতকের শ্রীমুখখানা দেখে মা তাঁর সব কষ্ট ভুলে যান, ছোট্ট সোনামণির তুলতুলে শরীরের সবখানেই সুগন্ধ, সবকিছুতেই আনন্দ, তাই দেখে মা অপার সুখ অনুভব করেন, সন্তানও সারা জীবন মায়ের ঋণ পরিশোধের সুযোগ পায়।

আমাদের সমাজে স্ত্রীদের চেয়ে তাঁদের স্বামীর বয়স থাকে গড়ে প্রায় পাঁচ বছর বেশি। প্রকৃতিগতভাবে নারী বাঁচেনও বেশি। শেষ বয়সের প্রায় সাত–আট বছর নারীকে বাঁচতে হয় বিধবা হয়ে! অথবা বার্ধক্যে পৌঁছে অতি বয়স্ক স্বামীর দেখভাল করাই নারীর জীবনে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ- নিদারুণ কষ্টের। প্রত্যেক স্বামীর কাছে সবিশেষ অনুরোধ, যথাসময়ে স্ত্রীর জন্য পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান করে রাখুন। কর্মজীবী স্ত্রীর অর্জিত বা গচ্ছিত অর্থসম্পদের দিকে কোনোক্রমেই হাত বাড়াবেন না, বরং তাঁকে সঞ্চয়ী হতে সহায়তা করুন। পাশাপাশি তরুণ বয়স থেকে প্রত্যেক নারীকেও তাঁর নিদানকালের রক্ষাকবচ হিসেবে অর্থ সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহরের অর্থ স্বামী পরিশোধ করে না, মৃত পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বণ্টনের সময় সন্তানেরা জীবিত মায়ের প্রাপ্য হিস্যার বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যায়! অর্থাৎ বিধবা প্রবীণ নারীকে যতভাবে নিঃসম্বল ও ক্ষমতাহীন করে রাখা যায়, তার সুনিপুণ কারিগর হচ্ছে স্বামী, ভাই, পুত্র—এককথায় অতি ঘনিষ্ঠ পুরুষেরা।

প্রবীণ নারীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সরকারি-স্বেচ্ছাসেবী পর্যায়ে আসুন আমরা লাগসই উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রাপ্য সম্মান আর অধিকারের ভিত্তিতে প্রবীণ নারীকে সুযোগ দিন, সেবা দিন, তিনিই আমাদের আগলে রাখবেন, স্বস্তির পথ দেখাবেন। সুপ্রিয় মা, তুমি খুব ভালো থাকো।

ড. এ এস এম আতীকুর রহমান: মহাসচিব, বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ