রোবোল্যাবের নেতৃত্বে তরুণ উদ্যোক্তা

জান্নাতুল ফেরদৌস।  ছবি: প্রথম আলো
জান্নাতুল ফেরদৌস। ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর ধানমন্ডির রোবোল্যাবে শিশুদের রোবোটিকস, ইলেকট্রনিকস, মেকানিকস ও প্রোগ্রামিং শেখানো হয়। নাসা আয়োজিত এ বছরের ‘নাসা হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ’-এর জন্য বাংলাদেশ থেকে ছয়জন মাধ্যমিক শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছে। তারা সবাই রোবোল্যাবের শিক্ষার্থী। এ বছরের ১৭ থেকে ১৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সেই রোবোল্যাবকে নেতৃত্বে দিচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তা জান্নাতুল ফেরদৌস।

জান্নাতুল ফেরদৌস বললেন, ‘আমাদের দেশে হাতেকলমে উদ্ভাবনী শিক্ষা দেওয়া হয় না বললেই চলে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে শিক্ষার্থীরা বাড়তি কিছু শেখারও সুযোগ হারাচ্ছে। এতে শিশু-কিশোরদের শুধু মানসিক বিকাশেই সমস্যা হচ্ছে তা নয়, ভবিষ্যতে প্রযুক্তিনির্ভর ক্যারিয়ার গড়তেও তারা পিছিয়ে পড়ছে। কিন্তু আমরা চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরাও এগিয়ে যাক। এ নিয়েই কাজ করছে রোবোল্যাব।’

কাজের ধরন সম্পর্কে জান্নাতুল বলেন, ‘প্রথমে আমরা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করি। পরে দেখলাম, তাদের সময় নেই। তখন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের দিকে আমরা মনোযোগী হই। আর এভাবেই রোবোল্যাবের চিন্তা মাথায় আসে।’

ঢাকার মেয়ে জান্নাতুল। তিনি ঢাকার একাডেমিয়া স্কুল থেকে ও লেভেল এবং ম্যাপললিফ থেকে এ লেভেল শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হন। বাবা আবদুল হামিদ আল হাদী ব্যবসায়ী, মা গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে জান্নাতুল বড়। তিনি বললেন, ‘আমার বাবা সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ করেছেন আমাদের পড়ালেখায়।’ স্কুলে পড়াশোনার সময় থেকেই জান্নাতুল টিউশনি করতেন এবং কোচিং সেন্টারে পড়াতেন। নিজের পড়াশোনার ব্যয় অনেকাংশে নিজেই বহন করেছেন তিনি।

জান্নাতুল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। কোনো কাজের সুযোগ থাকলে তা লুফে নিয়েছি। পাশাপাশি বাবার কাজেও সাহায্য করতাম।’ তিনি জানান, ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সময়ই তাঁর মনে হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক কিছু করার আছে। ২০১৫ সালের দিকে গড়ে তুললেন ‘নার্ড কমিউনিটি’ নামের ফেসবুকভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক সংগঠন। এই সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়।

২০১৭ সালে জান্নাতুলসহ মোট তিনজন মিলে ‘সিনপসিস এডুকেশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। গত বছরের গোড়ার দিকে ‘সিনপসিস এডুকেশন’-এর অধীনে রোবোল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়। জান্নাতুল রোবোল্যাবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার পাশাপাশি সিনপসিসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার। শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দেয় সিনপসিস। তা ছাড়া আইইএলটিএস, এসএটি ইত্যাদি টেস্টের প্রস্তুতি ও নিবন্ধনে সাহায্য করে থাকে।

জান্নাতুল ফেরদৌস প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা খাতের উন্নয়নে কাজ করতে চান। এই ক্ষেত্র নিয়ে তাঁর বিভিন্ন চিন্তাভাবনা ও স্বপ্ন রয়েছে—সুযোগ পেলে তিনি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, অভিভাবকেরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের উদ্ভাবনী শিক্ষার দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দেবেন।’

শিশু–কিশোরদের বয়সের ভিত্তিতে রোবোল্যাবে তিনটি কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি কোর্সের মেয়াদ আট মাস। ৬ থেকে ৮ বছরের শিশুরা প্রথম কোর্সে, ৯ থেকে ১১ বছরের শিশুরা দ্বিতীয় কোর্সে এবং ১২ থেকে ১৫ বছরের শিক্ষার্থীরা তৃতীয় কোর্সে ভর্তি হতে পারে। প্রতি কোর্সের শিক্ষা উপকরণ রোবোল্যাব থেকেই সরবরাহ করা হয়।