'বাসন্তী নিবাস' শুধুই নারীদের হোটেল

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জীবনের তাগিদে রাজধানী ঢাকায় ছোটে সব। পয়সা দিলে থাকা–খাওয়ার ভালো জায়গা জোটে। তবে তা পুরুষের জন্য যতটা সহজ, নারীর জন্য না। চাকরি বা পড়াশোনার জন্য কোনো পরীক্ষা, চিকিৎসা অথবা কোনো প্রয়োজনে নারীকে যদি ঢাকায় থাকতে হয় এবং তাঁর কোনো নিকটাত্মীয় বা মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকে, তবে বিপদে পড়তে হয়। আর নিরাপত্তাশঙ্কা তো আছেই। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন এমন নারীদের জন্যই তৈরি করছে বাসন্তী নিবাস।

সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিজেদের ভিন্নধর্মী কাজের মাধ্যমে আলোচিত। সম্প্রতি মেয়েদের জন্য হোটেল তৈরির খবর জানিয়েও আলোচনায় এসেছে তারা। রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে বিদ্যানন্দের অফিসেই একটা ফ্লোর নিয়ে তারা তৈরি করেছে বাসন্তী নিবাস।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ বাসন্তী নিবাস তৈরির পেছনের গল্প শোনান। তাঁদের ফাউন্ডেশনে প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক কাজ করেন। তার মধ্যে অনেক নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যেই একজন ঢাকায় এসে থাকতে গিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হন। এরপর থেকে বিদ্যানন্দ এই বিষয় নিয়ে ভাবতে থাকে। ২০১৮ সালে ফাউন্ডেশন ছোট পরিসরে হোস্টেলসুবিধা চালু করে। প্রথম দিকে এটা শুধুই বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য ছিল। এখন তা সবার জন্য বড় পরিসরে চালু হতে যাচ্ছে।

ফারুক আহমেদ বললেন, নিবাস নির্মাণের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে এটা চালু করার ইচ্ছা আছে। এখানে ৩৬ জন থাকতে পারবেন। এসি, ক্যাবিনেট, ওয়াই–ফাইসহ একটি হোটেলের প্রয়োজনীয় সব সুবিধাই থাকবে। থাকা ও খাওয়ার জন্য কিছু ফি দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ফি হাতের নাগালেই থাকবে। এখানের আয়ে হোটেলের ব্যবস্থাপনা খরচ মেটানো হবে। এর বাইরে কিছু থাকলে তা ফাউন্ডেশনের কাজে লাগানো হবে। বাসন্তী নিবাসে থাকতে হলে বিদ্যানন্দের ফেসবুক, ওয়েবসাইট বা ফোনে যোগাযোগ করে বুকিং করতে হবে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ঢাকা শাখার প্রধান সালমান খান বললেন, ‘থাকার জায়গার অভাবে অনেক মেয়ে বা নারী ভালো সুযোগ পেলেও ঢাকায় আসতে পারেন না। আমরা সেই সুযোগটাই করে দিতে চাই। যাতে তাঁরা নিরাপদে থাকতে পারেন। খরচটাও হাতের নাগালে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, যিনি থাকবেন, তাঁকে পরিচয়পত্র, যে কাজে এসেছেন তার কোনো কাগজসহ কিছু তথ্য জমা দিতে হবে। তবে বিদ্যানন্দের এই হোটেলে থাকতে হলে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমে কিছুটা সময় দিতে উৎসাহ দেওয়া হবে, যাতে তাঁরাও বুঝতে পারেন বিদ্যানন্দ কী ধরনের কাজ করে। এতে আস্থার জায়গাটা জোরালো হবে। তবে এটা বাধ্যতামূলক হবে না, যে যতটুকু সময় পারবেন দেবেন।

বগুড়ার রাখিমা খাতুনকে ঢাকায় প্রায়ই আসতে হয়। পাশাপাশি তিনি বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের একজন স্বেচ্ছাসেবক। বর্তমান চালু ছোট পরিসরে যে হোস্টেল রয়েছে এ সংগঠনের, সেখানে তিনি থেকেছেন। রাখিমা বললেন, ‘এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। যাঁদের হঠাৎ প্রয়োজনে ঢাকায় থাকতে হয়, তাঁদের জন্য থাকার নিরাপদ এক জায়গা। বড় পরিসরে হলে অনেক নারী এ থেকে উপকৃত হবেন।’