এবার লড়াই হবে যুক্তরাষ্ট্রে

ফিলিপ সি জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল মুটকোর্ট কম্পিটিশনের সেরা ৩ দল যাবে যুক্তরাষ্ট্রে। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিপ সি জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল মুটকোর্ট কম্পিটিশনের সেরা ৩ দল যাবে যুক্তরাষ্ট্রে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তিতর্কের আইনি লড়াই তখন শেষ। ফাইনালে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই যদিও তাঁদের হাতে জুটে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের টিকিট, তবু হাজার হোক ফাইনাল তো! টেনশন তো থাকবেই। দেশসেরা কে না হতে চায়? তাই দুই দলের লড়াইটাও হয়েছে সেয়ানে সেয়ানে। একদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ, অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেই বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। একেকটা সেকেন্ডও তখন বড় দীর্ঘ মনে হচ্ছিল। একসময় ঘোষিত হলো, ‘ফিলিপ সি জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল মুটকোর্ট কম্পিটিশন ২০২০-এর চতুর্থ বাংলাদেশ কোয়ালিফায়িং রাউন্ডে বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।’

দেশের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৫০ জন আইন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে মুখর ছিল এবারের আসর। জাতীয় পর্যায়ে চতুর্থবারের মতো এই আসর আয়োজিত হয় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে (ইউএপি)। এবারের আসরে প্রথম তিন স্থান অর্জনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক আগামী এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় ৬১তম ফিলিপ সি জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল মুটকোর্ট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

চূড়ান্ত পর্বে বিচারক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ও জুবায়ের রহমান চৌধুরী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর–উল ইসলাম।

রিফাত জেবিন খান, তাহসিন লুবাবা ও জালাল উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে গড়ে ওঠে এবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দল। অপর দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দলে ছিলেন সৈয়দ ফজলুল মাহ্দী, আরাফাত ইবনুল বাসার ও বাঁধন ঘোষ।

চ্যাম্পিয়ন দলের তাহসিন লুবাবা বলেন, ‘এবার আমাদের যে সমস্যা দেওয়া হয়েছিল, সেটি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা সমসাময়িক আন্তর্জাতিক আইনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জেনেছি। এটি নিছকই একটি প্রতিযোগিতা নয়, সারা দেশের সকল আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরির এক বিশাল ক্ষেত্রও বটে। সারা বিশ্বের মধ্যে আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছি। আশা করি আমার এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারব।’

রানার্সআপ হয়েও বেশ খুশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আরাফাত বলেন, ‘বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুটকোর্ট প্রতিযোগিতায় যাওয়ার স্বপ্ন ছিল অনেক। রিজিয়নাল রাউন্ডে নিজের প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা বেশ গর্বের। পথ এতটা সহজ ছিল না যদিও। তাই রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। এখানে নিজেদের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমরা। তবে চ্যালেঞ্জ এখন বড়। এখন প্রতিনিধিত্ব হবে দেশের। সবার দোয়ায় ভালো কিছু করার আশা রাখছি।’

এবারের আসরে সেরা মুটার নির্বাচিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিফাত জেবিন খান। সেরা মেমোরিয়াল অর্জন করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্পিরিট অব জেসাপ প্রদান করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সেরা নতুন দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

জেসাপ ইন্টারন্যাশনাল ল মুটকোর্ট কম্পিটিশন সারা বিশ্বের প্রতিটি আইনপড়ুয়ার কাছে বিশ্বকাপের মতো। এটি আইনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রাচীনতম প্রতিযোগিতা, যেখানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ১০০টির বেশি দেশের প্রায় ৭৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় অংশগ্রহণ করে। সারা বিশ্বে আয়োজিত সব জাতীয় পর্যায়ের মধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় আসরটি পঞ্চম বৃহত্তম।

২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথমবারই চমক দেখিয়ে সেরা নবীন দলের পুরস্কার পায় দুটি দলই।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস, অফিস অব ওভারসিজ প্রসিকিউটোরিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড ট্রেইনিং, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ওল্ড বেইলি চেম্বারস এবং আইনি পরামর্শদাতা মোবাইল অ্যাপ উকিলের সহযোগিতায় সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল ল স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন।

গত তিন বছরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুটি করে দল অংশ নিলেও এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে তিনটি দল। এবারের লড়াইয়ে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই আরও ভালো কিছু আশা করতেই পারে।