আমি কখনো ভয় পাই না

এলেন ডিজেনেরাস
এলেন ডিজেনেরাস

অ্যামি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী মার্কিন টিভি ব্যক্তিত্ব এলেন ডিজেনারেসের জন্ম ২৬ জানুয়ারি ১৯৫৮। তিনি ‘দি এলেন ডিজেনারস শো’ নামে একটি টিভি শো উপস্থাপনা করেন। এ বছর তিনি দ্বিতীয়বারের মতো একাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার) অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন।
বিশিষ্ট ও অবিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ (আপনারা তো জানেনই আপনারা কারা), সম্মানিত শিক্ষক এবং ২০০৯ সালের সব স্নাতকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তোমাদের আঙিনায় আসার জন্য তোমাদের ডাক পেয়ে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি।
আমি তোমাদের মতো কোনো কলেজে পড়িনি, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইনি। যদিও আমি একটি যন্ত্রণাদায়ক স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছিলাম। আমার বেড়ে ওঠার অনেকটা সময় আমি নিউ অরলিন্সে কাটিয়েছি। আমার মা কাজে যাওয়ার সময় আমিও প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে যেতাম। উদ্দেশ্য মায়ের পার্স থেকে কিছু না-কিছু চুরি করা। কিন্তু আজ আমি এখানে কেন এসেছি? অবশ্যই কিছু চুরি করতে নয়! তোমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছ, যে সুযোগ আমি কখনোই পাইনি। আজকে আমি এখানে শুধু তোমাদের জন্যই এসেছি। আমি এখানে এসেছি কারণ, আমি নিউ অরলিন্সকে ভালোবাসি, এখানে আমার জন্ম ও বড় হওয়া। আমি মাধ্যমিক স্কুল শেষ করে কোনো রকমে হাইস্কুল শেষ করলাম। কিন্তু সত্যিকার অর্থে আমার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। আমি জানতাম না আমি কী করতে চাই। আমি ছোটখাটো সব কাজ করেছি: আমি ঝিনুকের আবরণ ছাড়িয়েছি, অতিথি সেবিকার কাজ করেছি, মদের দোকানে কাজ করেছি, খাবার পরিবেশন করেছি, বাড়ি রং করেছি, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বিক্রি করেছি। আমার কোনো ধারণা ছিল না এবং আমি ভাবতাম শেষ পর্যন্ত আমি এমন কিছু করব, যাতে আমার বাড়িভাড়া ও অন্যান্য খরচ মেটানোর জন্য যথেষ্ট অর্থ থাকে। ওই সময় আমি যখন তোমাদের বয়সী ছিলাম, আমার সত্যিই কোনো পরিকল্পনা ছিল না।
যা-ই হোক, জীবনে আমি কী করতে চাই সে ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা ছিল না এবং যেভাবে আমার জীবন চলছিল তা ছিল খুবই দুঃখজনক। সম্ভবত আমার বয়স যখন ১৯, তখন আমার এক বান্ধবী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়।
আমি দুর্ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে এসেছিলাম কিন্তু আমি জানতাম না সেখানে আমার বান্ধবী ছিল। কিছুক্ষণ পর আমি তা জানলাম। আমি একটি ভূগর্ভস্থ অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম, আমার কোনো টাকাপয়সা ছিল না; কোনো উষ্ণতা বা বাতাস ছিল না সেখানে। মেঝেতে একটি তোশক ছিল এবং অ্যাপার্টমেন্টটি প্রচুর মাছিতে ভরা। আমি অনুসন্ধান করতে লাগলাম, কেন সে হঠাৎ করে চলে গেল? আমি ভাবলাম, এটা কি আরও সুবিধাজনক হতো না যদি আমরা আমাদের প্রয়োজনে ঈশ্বরকে ফোন করে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারতাম!! আমি ঈশ্বরের সঙ্গে আমার কল্পিত কথোপকথনগুলো লিখে রাখতে শুরু করলাম, যেখানে আমি নিজের ভেতরের সব কথা লিখতাম। যদিও এগুলো ছিল একপেশে। লেখা শেষ করে একবার চোখ বুলাতাম এবং নিজেকে বলতাম, ‘আমি আজ রাতে জনি কার্সনের শোতে এটা করতে যাচ্ছি, আমি এই শোর ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি।’ ওই সময় জনি ছিলেন সর্বেসর্বা। পরবর্তী সময়ে আমিই হলাম ওই শোর ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র নারী অতিথি, যা কি না শুধু ঈশ্বরের সঙ্গে আমার কল্পিত কথোপকথনের জন্যই।

তারপর আমার পেশা পরিবর্তন হলো, এটা ছিল ভিন্ন মাত্রার সফলতা। আমি এটা অনেক বছর আগের কথা বলছি। আমি অনেক লজ্জা ও ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলাম। শেষমেশ সেখান থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং চাইছিলাম সৃজনশীল কিছু করতে। আমার চারপাশে বিরাজমান নীরবতা থেকে নিজেকে মুক্ত করা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। আমি শুধু সৎ থাকতে চেয়েছিলাম। আমি অনুমান করছিলাম এর জন্য কত খারাপ কিছু ঘটতে পারে? আমি চাকরি হারাতে পারি, তাই তো। এবং আমি চাকরিটা হারিয়েছিলাম। ছয় বছর পর আমাকে না বলে শোটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমি পত্রিকা থেকে তা জেনেছিলাম। এরপর আমি তখন আর কোনো শোর প্রস্তাব পেলাম না। কেউ আমার সংস্পর্শে আসতে চাইত না।
আমার অনেক খারাপ সময় গেছে, আমি শাস্তি পাচ্ছিলাম। তারপর আমি একটি টক শোর প্রস্তাব পেলাম, কিন্তু কোনো স্টেশনই তা কিনতে চাইল না। তারা ভাবল, কেউ আমার শো দেখবে না। সত্যি বলতে কি, সবকিছু হারানো আমার জন্য খুব দরকারি ছিল। কারণ, তাতে আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি খুঁজে পেয়েছি। আসলে এটাই সেই জিনিস, যা আমি চেয়েছি, ভয়মুক্ত থাকা। আমি কখনো ভয় পাই না। আমি মুক্ত। আমার কোনো গোপনীয়তা নেই। আমি জানি, আমি সব সময় ঠিক আছি। কারণ, আমি জানি, আমি কে।
সবশেষে আমি বলব, আমি যখন ছোট ছিলাম, আমি ভাবতাম সফলতা হলো ভিন্ন কিছু। আমি বিখ্যাত হতে চাইতাম। তারকা হতে চাইতাম। কিন্তু বড় হয়ে আমি পৃথিবীটাকে দেখতে চাইলাম।
আজ আমার সফলতার ধারণা ভিন্নতর। তোমরাও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সফলতার ভিন্ন সংজ্ঞা অনুধাবন করবে। আমার জন্য জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি হলো সততার সঙ্গে বাঁচা। কখনো এমন কিছু করতে নিজেকে চাপ দিয়ো না, যা তুমি নও। শেষ করার আগে বলছি, নিজের ইচ্ছাকে মূল্য দাও, নিজের কাছে সৎ থাকো। কখনো অন্যকে অনুকরণ করবে না। কাউকে উপদেশ দেবে না। কারণ, এটা তোমার কাছে আবার ফিরে আসবে এবং তোমাকেই কামড়ে ধরবে। সুতরাং, নিজের কাছে সৎ থাকো, দেখবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
আমি জানি, তোমরা অনেকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সচেতন, কিন্তু এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সুতরাং, ২০০৯-এর স্নাতকেরা, আমি তোমাদের অভিনন্দন জানিয়ে শেষ করছি।
সূত্র: ২০০৯ সালে নিউ অরলিন্সে অবস্থিত টুলান ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে দেওয়া এলেনের বক্তৃতা। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: মুন রহমান