'লোকে কটু কথা শোনায়'

দেশে রাগবির মতো অপ্রচলিত খেলার খেলোয়াড় তারা। এ খেলায় তাদের সম্পৃক্ততায় এক পক্ষ যেমন চমকিত হয়, তেমনি আরেক পক্ষ থেকে জোটে তিরস্কার।

‘মার্সেল এয়ার কন্ডিশনার ৪র্থ মহিলা জাতীয় রাগবি প্রতিযোগিতা ২০২০’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বাগেরহাট জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সম্প্রতি ঢাকায় আসা মেয়েরা পল্টন ময়দান আউটার স্টেডিয়াম মাঠে বসে সে গল্পই শোনাচ্ছিল।

বাগেরহাটের নীতু খাতুনের ছোটবেলা থেকে খেলাধুলায় আগ্রহ থাকলেও রাগবি খেলতে চায় শোনার পর মা-বাবা প্রথমে বুঝেই উঠতে পারছিলেন না খেলাটি কী? কীভাবে খেলে? সব শুনে ততটা স্বাগত না জানালেও মেয়েকে খেলতে দিচ্ছেন। তবে যখন প্রশিক্ষক মেয়েকে ঢাকার টুর্নামেন্টে খেলতে দেওয়ার অনুমতি চাইলেন, তখন শুরুতে বেঁকে বসলেন বাবা আলমগীর শেখ। অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাঁকে রাজি করানো হলো।

লখপুর আলহাজ আম্বিয়া ইসহাক কলেজিয়েট গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থী নীতু খাতুন (১৬) বলে, ‘পরিবার ও স্কুল থেকে সমর্থন পেলেও আশপাশ থেকে রাগবি খেলার জন্য কটু কথা শুনতে হয়। সেসব কানে নিইনি।

মাঠে মেয়েরা রাগবি খেলছে।  ছবি: সংগৃহীত
মাঠে মেয়েরা রাগবি খেলছে। ছবি: সংগৃহীত

একই কথা বলল পাশে বসা বাগেরহাট জেলা দলের রাগবি খেলোয়াড় ফাতেমা খাতুন। সে বলে, ‘এখন তো সব ইভেন্টে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে। আশপাশের কটু কথা পেছনে ফেলে সামনে এগোতে হয়েছে।’ দলটির সঙ্গে আসা বেতাগা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক লাভলী ইয়াসমিন বললেন, ‘৩০ জনের মতো ছাত্রী নিয়ে রাগবি দল তৈরি করেছিলাম। কিন্তু অভিভাবকদের অনেক বাধার কারণে ভালো খেলে, এমন অনেক মেয়েকে ঢাকায় টুর্নামেন্টের জন্য আনা সম্ভব হয়নি।’

তিন বছর ধরে বাগেরহাট দলটির প্রশিক্ষণে সহায়তা দিয়ে আসছে স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্স। দলটির কোচ আরিফ বিল্লাহ জানান, নানা বাধার মুখেও এই প্রথমবার মেয়েদের দলটিকে ঢাকায় আনা গেছে।

বাগেরহাট জেলার ম্যাচটি ছিল জামালপুর জেলা দলের সঙ্গে। খেলায় জামালপুরের মেয়েরা জয়ী হয়। জামালপুর দলের খেলোয়াড় মোসাম্মত মিষ্টি খাতুন (১৭) জানায়,  তার ক্ষেত্রে বাসা থেকে কোনো আপত্তি ওঠেনি।

রাগবি ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবং এই টুর্নামেন্টের সম্পাদক পারভিন নাছিমা নাহার বলেন, ‘অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা দিতে পারিনি আমরা। টুর্নামেন্টের জন্য থাকা-খাওয়া আর জার্সি ফ্রি।’ তিনি বলেন, রাগবি খেলায় মেয়েরা বেশ আগ্রহী। তারা যে খেলতে আসে, এটাও কম নয়।