'এভারেস্ট আমার কাছে ওয়ার্ল্ড কাপের মতো'

তরুণ পর্বতারোহী ও লেখক ইকরামুল হাসান। ছবি: আবদুস সালাম
তরুণ পর্বতারোহী ও লেখক ইকরামুল হাসান। ছবি: আবদুস সালাম

হিমালয়ের ‘কেয়াজো-রি’, ‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ ও ‘হিমলুং’ পর্বতশৃঙ্গ জয় করে এখন এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখছেন তরুণ পর্বতারোহী ইকরামুল হাসান শাকিল। বাংলাদেশ থেকে তো এভারেস্ট একাধিকবার জয় করা হয়ে গেছে, তারপরও কেন এভারেস্ট জয় করার স্বপ্ন—এমন প্রশ্নের জবাবে ইকরাম বললেন, ‘আমার কাছে এভারেস্ট ওয়ার্ল্ড কাপের মতো—যা বারবার জয় করা যায়।’ গতকাল বুধবার কথা হয় ইকরামের সঙ্গে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ১৯৯৪ সালে ইকরামুলের জন্ম। গাজীপুরের জনতা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাট শেষ করে উত্তরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন। তিন ভাইয়ের মধ্যে ইকরাম সবার বড়। ২০১৯ সালে বাবা মো. খবির উদ্দিন মারা গেলে সংসারের ভার এসে পড়ে ইকরামের ওপর। সংসার ও পড়াশোনার খরচ চালাতে সুপারশপে বিক্রয়কর্মী হিসেবেও করেছেন।

এই জীবনসংগ্রামের মধ্যেও সৃজনশীল কাজ চালিয়ে গেছেন তিনি। খেলাধুলায়ও ভালো ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই ভিন্ন কিছুর করার চেষ্টা ছিল ইকরামের। বললেন, ‘আমি চাইতাম পত্রিকায় আমার নাম ও ছবি ছাপা হোক। আমি আর দশজন থেকে আলাদা হতে চাইতাম।’ গাজীপুরে ধূমপানের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু। তারপর ২০১০ সালে যোগ দেন পদাতিক নাট্য সংসদ বাংলাদেশে। এই নাট্যদলের হাত ধরেই তাঁর প্রথম ভারতে যাওয়া। ‘নুরু মিয়ার কিচ্ছা’ নামে একটি নাটক লিখেছেন তিনি, তা এখন মঞ্চস্থ করছে পদাতিক।

‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ জয় করার পর ইকরামুল হাসানের উচ্ছ্বাস। ছবি: সংগৃহীত
‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ জয় করার পর ইকরামুল হাসানের উচ্ছ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

২০১৩ সালে যোগ দেন ‘বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব’-এ। পর্বতারোহণের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন ভারত থেকে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো ২০ হাজার ২৯০ ফুট উচ্চতার কেয়াজো-রি পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে যান এম এ মুহিতের নেতৃত্বে সাত পর্বতারোহী। তাঁদের একজন ইকরামুল হাসান। তবে শেষ পর্যন্ত মুহিত, ইকরাম ও কাজী বাহলুল শৃঙ্গটি জয় করেন। ২০১৭ সালে লারকে পিক জয়ের অভিযানেও ছিলেন তিনি। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে খুব কাছাকাছি গিয়ে তা জয় করা হয়নি। পরের বছর ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন তিনি। প্রশিক্ষণের সময়েই তিনি জয় করেন ‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ শৃঙ্গ।

মুঠোফোনে কথা হলো বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাবের সভাপতি এভারেস্টজয়ী এম এ মুহিতের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমি ইকরামুলকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল পর্বতারোহীদের মধ্য সে সেরা। ও একদিন আমাদেরও ছাড়িয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয়ভাবে যদি কখনো কাউকে এভারেস্ট জয় করতে পাঠাতে হয়, তাহলে ইকরামুলকে পাঠানো উচিত। ’

হিমলুংয়ের চূড়ায় উঠছেন ইকরামুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
হিমলুংয়ের চূড়ায় উঠছেন ইকরামুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালে বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের আট পর্বতারোহী ‘হিমলুং’ জয়ের অভিযানে নামেন । সেই দলে অংশ নিয়ে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমলুং-এর চূড়ায় পা রাখেন। এবার তিনি এভারেস্ট জয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জানান, এভারেস্ট জয় তাঁর স্বপ্ন। তিনি এভারেস্ট জয়ের মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা করছেন।

পাহাড় জয়ের আগে ইকরাম আলোচনায় আসেন কলকাতা থেকে ঢাকামুখী পদযাত্রা করে। ২০১৩ সালে তিনি কলকাতা থেকে হেঁটে ১১ দিনে ঢাকা পৌঁছান। ক্যামেরার পেছনেও কাজ করছেন তিনি। অনেক টিভি অনুষ্ঠান ও নাটকে সহকারী নির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন। আর নিজে এ পর্যন্ত তৈরি করেছেন পাঁচটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র।

নিজের অভিযানগুলোর অভিজ্ঞতা পাঠককে শোনাতে কলমও ধরেছেন ইকরাম। অভিযান নিয়ে তাঁর লেখা বইগুলো হলো, ‘মাউন্ট কেয়াজো-রি: শিখরে বাংলাদেশ’, ‘পদচিহ্ন এঁকে যাই’ ও ‘পর্বতাভিযানে শ্বাসরুদ্ধকর পনেরো ঘণ্টা’। ‘হেয়ালী ফেরা’ তাঁর কাব্যগ্রন্থ। আর সময় পেলে বিভিন্ন আলোচনা সভায় নিজের এগিয়ে যাওয়ার গল্প শোনান ইকরামুল হাসান।