দুই বোনই পুলিশ কর্মকর্তা

নাসরিন আক্তার ও শিরিন আক্তার।
নাসরিন আক্তার ও শিরিন আক্তার।

গ্রামে স্কুলপড়ুয়া সমবয়সী মেয়েদের বিয়ে নিয়ে অভিভাবকেরা যখন ব্যস্ত, তখন তাঁদের বাবার সাফ কথা, মেয়েদের আগে পড়ালেখা শেষ করতে হবে। শুধু তা–ই নয়, পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করে স্বাবলম্বী হওয়ার পরই বিয়ে। মেয়েরাও তাঁর কথা রেখেছেন। বাবা মো. আকবর হোসেনের উৎসাহে নাসরিন আক্তার ও শিরিন আক্তার বর্তমানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আকবর হোসেনের অন্য দুই মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।

সম্প্রতি প্রথম আলোর কার্যালয়ে বসে বাবার উৎসাহে তাঁদের দুই বোনের পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার গল্প শোনালেন সহকারী পুলিশ সুপার (শিক্ষানবিশ) শিরিন আক্তার। ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসরিন আক্তারের দেখানো পথ ধরে এ পেশায় যোগ দিয়েছেন শিরিন। বড় বোন নাসরিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে ৩১তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশে যোগ দেন। আর শিরিন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা শেষে ৩৬তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশে যোগ দেন।

এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পশ্চিম ভাদেশ্বর গ্রামে। বাবা আকবর হোসেন উপজেলা স্যানিটারি পরিদর্শক ছিলেন। চার বোন এক ভাইয়ের মধ্যে ভাই মনজুর হোসেন সবার বড়। এরপরই নাসরিন। শিরিন তৃতীয়। চতুর্থ নুরুন আক্তার এবং সবার ছোট শারমিন আক্তারের পড়াশোনা শেষ হয়নি। তাঁদের মা জাহানারা বেগম।

ঝিনাইদহে শিরিনের কর্মস্থল। বললেন, বাবার উৎসাহ আর পুলিশ কর্মকর্তা বোনকে দেখে পুলিশের ইউনিফর্ম গায়ে দেওয়ার ইচ্ছাটা তীব্র হয়। বড় বোন বিসিএস পরীক্ষার সময় ক্যাডার পছন্দের জায়গায় পুলিশ দেবেন কি না, জানতে চান বাবার কাছে। বাবা বলেছিলেন, ‘অবশ্যই পুলিশ দেবে।’

শিরিন বলেন, ‘আমরা দেখতাম, গ্রামে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া মেয়েদেরও বিয়ে হচ্ছে। পাড়া–প্রতিবেশীরা আমার বাবাকেও মেয়েদের বিয়ে দিতে বলতেন। মেয়েদের বেশি পড়াশোনার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতেন। কিন্তু বাবা সেসবে কখনো কান দেননি। আমাদের এত দূর আসার পেছনে বাবাই মূল প্রেরণার জায়গা। মাও বাবাকে সমর্থন দিয়েছেন, কখনো বাধা দেননি।’

শিরিন বলেন, ‘ভাদেশ্বরসহ আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের মধ্যে আমরা দুই বোনই প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। আমরা এখন গ্রামগুলোতে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের বোনদের উদাহরণ টেনে গ্রামের অনেক মেয়ে এখন উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। এটা দেখতেও ভালো লাগে।’

নাসরিনের স্বামী মো. আল রফিক এবং শিরিনের স্বামী মো. নজরুল ইসলাম দুজনই ব্যাংক কর্মকর্তা। প্রথম আলোয় বসে শিরিন যখন কথা বলছিলেন, তখন পাশে বসা স্বামী নজরুল ইসলাম জানান, তিনি তাঁর স্ত্রীর পেশাকে সম্মান করেন। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন।

শিরিন বলেন, পুলিশ সম্পর্কে একসময় মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ভাবনা ছিল। এখন তা পরিবর্তন হচ্ছে। পুলিশ মানুষের বন্ধু—মানুষের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে। আর এ পেশায় নারী-পুরুষকে আলাদাভাবে দেখার সুযোগ নেই।

শিরিন বলেন, ‘পুলিশ হয়ে বিপদগ্রস্ত একজন মানুষকে আমি সঙ্গে সঙ্গে সেবা দিতে পারছি, যা অন্য কোনো পেশায় সম্ভব নয়।’ তাঁর মতে, এ পেশায় আরও বেশিসংখ্যক মেয়ের যোগ দেওয়া উচিত। তাহলে বিপদে পড়া নারীরা তাঁদের সমস্যার কথা সহজে তুলে ধরতে পারবেন।