লাল-সবুজে ইমরানের গিনেস রেকর্ড

এনভেলাপ মোজাইক ফ্ল্যাগ বা একটার সঙ্গে আরেকটি খাম সাজিয়ে তৈরি করা পতাকা। একক চেষ্টায় এমনই পতাকা বানিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছেন ঢাকার তরুণ ইমরান শরীফ। রেকর্ড গড়তে লাল-সবুজ খাম ব্যবহার করে তিনি বানিয়েছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ২০ এপ্রিল ইমরানের বিশেষ এই পতাকাকে বিশ্বরেকর্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে গিনেস কর্তৃপক্ষ।

একক উদ্যোগে লাল-সবুজ পাতাকা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পেরে গর্বিত ইমরানও। ২৪ এপ্রিল মুঠোফোনে আলাপচারিতায় প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দেশের পতাকা নিয়ে কিছু করতে পারা সব সময় গর্বের। আমার জায়গা থেকে এটুকু করতে পেরে সত্যিই আনন্দ লাগছে।’

এটি ইমরানের দ্বিতীয় গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। গত বছরের ২৯ জুলাইয়ে গড়া তাঁর প্রথম রেকর্ডটি এখনো বহাল রয়েছে। সেটা ছিল একক চেষ্টায় বিশ্বের দীর্ঘতম পেপার ক্লিপ চেইন বা শিকল বানানোর জন্য।

ইমরান শরীফের বানানো পতাকা সম্পর্কে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, বিশ্বের দীর্ঘতম এনভেলাপ মোজাইক পতাকাটি ৬০ বর্গমিটারের। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর পতাকাটি বানিয়েছেন ঢাকার ইমরান শরীফ। গিনেস রেকর্ডে এই বিভাগের আনুষ্ঠানিক নাম ‘লার্জেস্ট এনভেলাপ মোজাইক (ফ্ল্যাগ)’।

ইমরান জানান, রেকর্ড গড়তে তিনি দিবস ও স্থানকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এ জন্য গত মহান বিজয় দিবসে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মিলনায়তনকে নির্বাচন করেছিলেন পাতাকা বানানোর জন্য। তিনি যেমনটি বলছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জিয়নকাঠি। এমন একটি রেকর্ড গড়তে তাই সেই জাদুঘরকেই পাশে পেয়েছিলাম।’

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আনুপাতিক মাপ ঠিক রেখে পতাকাটি বানান ইমরান। এতে ব্যবহার করেন ৪ হাজার ৯৭০টি খাম। যার মধ্যে সবুজ অংশের জন্য খাম ব্যবহার করেন ৩ হাজার ৮৮৩টি, লাল অংশের জন্য ১ হাজার ৮৭টি। নির্দেশনা অনুযায়ী, এই খামগুলোও নিজ হাতে তৈরি করতে হয়েছে ইমরানকে। রেকর্ড গড়ার সেই পেক্ষাপটই জানালেন প্রথম আলোকে, ‘আমি তো প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার খাম বানিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মিলনায়তনে যতটুকু ফাঁকা জাগয়া পেয়েছিলাম, সেখানে সবগুলো খাম ব্যবহার করা যায়নি।’

গত বিজয় দিবসে পাতাকা বানালেও কাজটি তিনি শুরু করেছিলেন আরও আগে। প্রথম পর্যায়ে গত বছরের ২৩ এপ্রিল তিনি গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে রেকর্ড গড়তে চেয়ে আবেদন করেন। প্রায় তিন মাস পর তারা অনুমোদন দেয় ইমরানকে। এরপর শুরু করেন আনুষ্ঠানিকতা। সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে তাঁকে বানিয়ে নিতে হয়েছিল নির্ধারিত আকারের ও ওজনের লাল-সবুজ কাগজ। এর সঙ্গে খামের ভেতরে লেখার জন্যও নিতে হয়েছিল আলাদা কাগজ।

ইমরান বলেন, ‘চিঠির ভেতরের সে কাগজে অবজেক্ট হিসেবে আমি জাতীয় সংগীতের প্রথম দুই লাইন তুলে দিয়েছিলাম। কারণ, পরিপূর্ণ চিঠি হতে হলে খামের ভেতরে কিছু লেখা থাকতে হয়।’

৩১ বছর বয়সী ইমরান শরীফ ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামে আইন বিষয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইন পেশায় কাজ করেন। দেশের ক্রীড়া, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যসহ নানা বিষয়ে গিনেস রেকর্ড করার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার স্বপ্ন দেখেন।

উল্লেখ্য, বিচিত্র বিষয়ে রেকর্ড সংরক্ষণ করার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী পরিচিত তাদের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস নামে রেকর্ড নথিবদ্ধ করার বার্ষিক প্রকাশনার জন্য। ১৯৫১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় এই রেকর্ড সংরক্ষণের বইটি। ২০০০ সালে পর্যন্ত প্রকাশনাটি বের হতো দ্য গিনেস বুক অব রেকর্ডস নামে। বিশ্বের ২৩টি ভাষায় প্রকাশিত বই ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত রেকর্ড হালনাগাদ করা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ৪৭ হাজার বিষয়ের ওপর রেকর্ড সংরক্ষণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।