খাদ্যবিষয়ক বর্ষসেরা আলোকচিত্রের পুরস্কার বাংলাদেশির

‘আফটার এক্সোডাস’ ছবিটির জন্য বর্ষসেরা আলোকচিত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন কে এম আসাদ।
‘আফটার এক্সোডাস’ ছবিটির জন্য বর্ষসেরা আলোকচিত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন কে এম আসাদ।

বিশ্ব খাদ্যবিষয়ক আলোকচিত্র পুরস্কারে বিজয়ী হয়েছে বাংলাদেশি পাঁচ আলোকচিত্রীর তোলা আটটি ছবি। সার্বিকভাবে প্রতিযোগিতার বর্ষসেরা ছবিটিও নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশেরই একটি ছবি।

পেশাদার ও অপেশাদার আলোকচিত্রীদের সম্মানজক এই পুরস্কারের নাম ‘পিংক লেডি ফুড ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’। যুক্তরাজ্যের বাজারে ‘পিংক লেডি’ মূলত সুস্বাদু আপেল। ফলের জন্য পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানটি ৯ বছর ধরে খাদ্যবিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে।

গত ২৮ এপ্রিল করোনাভাইরাসের কারণে অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে বাংলাদেশের আলোকচিত্রী আবীর আবদুল্লাহ, এ এন এম জিয়া, অ্যাপলো শাফায়াত হোসাইন, আজিম খান রনি ও কে এম আসাদের ছবি স্থান পেয়েছে।
এর মধ্যে ‘পলিটিকস অব ফুড’ বা ‘খাবারের রাজনীতি’ বিভাগে আসাদের একটি আলোকচিত্র প্রথম স্থানের পাশাপাশি প্রতিযোগিতার বর্ষসেরা ছবি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এই পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে আলোকচিত্রীকে দেওয়া হবে ৫ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড।

আলোকচিত্রী কে এম আসাদ। ছবি: প্রথম আলো
আলোকচিত্রী কে এম আসাদ। ছবি: প্রথম আলো

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এ বছর বিশ্বের ৭০টি দেশ থেকে ‘পিংক লেডি ফুড ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ প্রতিযোগিতার ২৭টি বিভাগে ৯ হাজার ছবি জমা পড়েছিল। সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে প্রতিটি বিভাগে তিনটি করে আলোকচিত্র বিজয়ী করা হয়েছে।
বিভাগগুলোতে স্থান পাওয়া ছবির জন্য পুরস্কার হিসেবে আলোকচিত্রীদের প্রত্যেককে পদক দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিছু বিভাগের বিজয়ীরা পুরস্কার হিসেবে অর্থমূল্যও পান।

টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার সময় মুসল্লিরা রান্না করছেন। আসাদের তোলা এই ছবিটি ‘ফুড ফর সেলিব্রেশন’ বিভাগে প্রথম হয়েছে।
টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার সময় মুসল্লিরা রান্না করছেন। আসাদের তোলা এই ছবিটি ‘ফুড ফর সেলিব্রেশন’ বিভাগে প্রথম হয়েছে।

পিংক লেডি ফুড ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ারের পুরস্কারের ‘ফুড ফর সেলিব্রেশন’ বিভাগেও প্রথম হয়েছে কে এম আসাদের একটি ছবি। আসাদের ছবিটিতে দেখা যায়, টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার সময় অনেক মুসল্লি রান্না করছেন।
একই বিভাগে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী আজিম খানের তোলা ছবিটি হয়েছে দ্বিতীয়। তাঁর ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কার্তিকব্রত বা রাখের উপবাস উপলক্ষে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে প্রার্থনা করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
ফুড ফর সেলিব্রেশন বিভাগ ছাড়াও আলোকচিত্রী আজিম খানের দুটি ছবি স্থান পেয়েছে প্রতিযোগিতার ভিন্ন দুটি বিভাগে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট থেকে মুঠোফোনে তোলা স্তূপকৃত ইলিশ মাছের ছবিটি প্রথম স্থান অর্জন করেছে ‘অন দ্য ফোন’ বিভাগে।
আলোকচিত্রী এ এন এম জিয়া ও আবীর আবদুল্লাহর ছবি ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ফুড ফর লাইফ’ বিভাগে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে। অ্যাপলো শাফায়াত হোসাইনের একটি ছবি ‘ইউন্টারবোথাম ডার্বি ফুড ফর সেল’ বিভাগে হয়েছে তৃতীয়।
বাংলাদেশি আলোকচিত্রীদের ছবিগুলো ছাড়াও প্রতিযোগিতার বেশ কিছু বিভাগে বিদেশি নাগরিকদের আলোকচিত্রে ধরা দিয়েছে চিরায়ত বাংলাদেশ।

‘হিলশা’ শিরোনামে ছবিটি ‘অন দ্য ফোন’ বিভাগে প্রথম হয়েছে। ছবি: আজিম খান রনি
‘হিলশা’ শিরোনামে ছবিটি ‘অন দ্য ফোন’ বিভাগে প্রথম হয়েছে। ছবি: আজিম খান রনি

আসাদের ‘আফটার এক্সোডাস’
খাবারের জন্য অপেক্ষারত ক্ষুধার্ত শিশুদের ছবিটি কক্সবাজারের উখিয়ার একটি রোহিঙ্গা শিবির থেকে তুলেছিলেন আলোকচিত্রী কে এম আসাদ। তাঁর তোলা সে ছবিটিই পেয়েছে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘পিংক লেডি ফুড ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার ২০২০’।
কে এম আসাদের (৩৬) পুরস্কার বিজয়ী ছবিটির নাম ‘আফটার এক্সোডাস’। অর্থাৎ মিয়ানমার থেকে লাখো রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পরের চিত্র। ২০১৭ সালের অক্টোবরে তোলা আসাদের ছবিতে ধরা পড়েছে সেই পরিস্থিতির কিছুটা।

রাখের উপবাস উপলক্ষে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনারত মানুষের ছবিটি ‘ফুড ফর সেলিব্রেশন’ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে। ছবি: আজিম খান রনি
রাখের উপবাস উপলক্ষে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনারত মানুষের ছবিটি ‘ফুড ফর সেলিব্রেশন’ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে। ছবি: আজিম খান রনি

ছবিটি সম্পর্কে আলোকচিত্রী আসাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৭ সালের সে সময়টায় রোহিঙ্গারা এসে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় কোনো রকম আশ্রয় নিয়েছিল। রান্না করা খাবারের ছিল তীব্র সংকট। এমনই একদিন আমিসহ কয়েকজন আলোকচিত্রী খবর পেয়েছিলাম কক্সবারের উখিয়ার একটি শরণার্থী ক্যাম্পে শিশু ও বৃদ্ধের খাবার দেওয়া হয়। তুরস্কের একটি সাহায্য সংস্থার খাবার বিতরণে গিয়েই তুলেছিলাম ছবিটি।’

‘ফুড ইন দ্য ফিল্ড’ বিভাগে তৃতীয় অবস্থানে থাকা আজিম খান রনির একটি ছবি।
‘ফুড ইন দ্য ফিল্ড’ বিভাগে তৃতীয় অবস্থানে থাকা আজিম খান রনির একটি ছবি।

২৯ এপ্রিল আলাপচারিতায় আসাদ শোনালেন ছবিটি তোলার পেছনের গল্প। তাঁরা যখন ক্যামেরা কাঁধে গেলেন উখিয়ার সেই ক্যাম্পে, দেখলেন শিশুদের চোখেমুখে তীব্র ক্ষুধার ছাপ।
আসাদ বলেন, ‘সেই তাকানোর মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলাম, তীব্র ক্ষুধার কষ্ট। মনে হচ্ছিল, খাবার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোগ্রাসে খেয়ে ফেলবে। দৃশ্যটা আমার জন্য খুবই কষ্টদায়ক ছিল।’

সন্তানদের নিয়ে খেতে বসেছেন এক পাথরশ্রমিক মা। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে তোলা এ এন এম জিয়ার ছবিটি ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ফুড ফর লাইফ’ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে।
সন্তানদের নিয়ে খেতে বসেছেন এক পাথরশ্রমিক মা। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ থেকে তোলা এ এন এম জিয়ার ছবিটি ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ফুড ফর লাইফ’ বিভাগে দ্বিতীয় হয়েছে।

সেই কষ্ট মনের ভেতর চেপেই কিছু ছবি তোলেন আসাদ। সেসব ছবি থেকে গত মাসে প্রতিযোগিতার জন্য পাঠানোর সময় শিরোনাম দেন ‘আফটার এক্সোডাস’। খাবারের রাজনীতি বিভাগে সে ছবিটিই হয়েছে বিজয়ী। আসাদ পেলেন বর্ষসেরা আলোকচিত্রীর পুরস্কার।

কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের এক শিশু খাবার খাচ্ছে। ছবিটি ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ফুড ফর লাইফ’ বিভাগে তৃতীয় হয়েছে। ছবি: আবীর আবদুল্লাহ
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের এক শিশু খাবার খাচ্ছে। ছবিটি ‘ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ফুড ফর লাইফ’ বিভাগে তৃতীয় হয়েছে। ছবি: আবীর আবদুল্লাহ
‘ইউন্টারবোথাম ডার্বি ফুড ফর সেল’ বিভাগে ছবিটি তৃতীয় হয়েছে। ছবি: অ্যাপলো শাফায়াত হোসাইন
‘ইউন্টারবোথাম ডার্বি ফুড ফর সেল’ বিভাগে ছবিটি তৃতীয় হয়েছে। ছবি: অ্যাপলো শাফায়াত হোসাইন