সুমাইয়ার সঙ্গী ফুটবলের কসরত

সুমাইয়া মাসতুসিমা। ছবি: সংগৃহীত
সুমাইয়া মাসতুসিমা। ছবি: সংগৃহীত

লিগামেন্টের চোট থেকে ফিরে মার্চের শুরুতে মাঠে নামার অনুমতি পেয়েছিল সুমাইয়া মাসতুসিমা। এর কিছুদিন পরেই করোনাভাইরাসের কারণে পুরো দেশ স্থবির হয়ে গেল। ফুটবল মাঠে ফেরা হলো না বিভিন্ন ফুটবল টুর্নামেন্টের পরিচিত মুখ সুমাইয়ার। মাঝমাঠে দুর্দান্ত খেলে সে। এখন সি ব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে এ লেভেল পড়ছে, এর আগে ও লেভেল পর্যন্ত পড়েছে ডন বসকো স্কুল অ্যান্ড কলেজে। হেসে বলছিল, ‘দুটি স্কুলের ফুটবল দলই আমার তৈরি করা।’

ঘরবন্দী দিন শুরু হওয়ার পর মোবাইল ফোন আর কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়েই কাটছিল দিনগুলো। বাইরে বের হওয়া নিষেধ বলে প্রতিদিনের সঙ্গী ফুটবলকে দারুণ মিস করছিল সে। এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন ফেসবুকে সাজিদ নামের এক তরুণের ফুটবল নিয়ে নানা রকম ফ্রিস্টাইল টেকনিক (ফুটবল নিয়ে নানা রকম কসরতের খেলা) দেখে আগ্রহ হয়। সুমাইয়া সাজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অনলাইনেই সাজিদ বুঝিয়ে দেন, কীভাবে এই চর্চা শুরু করা যায়। অনলাইন ঘেঁটে ফ্রিস্টাইল সম্পর্কে সুমাইয়া আরও ভালোভাবে জানতে শুরু করে। 

শুরুর দিকে ঘরেই চলছিল চর্চা। কিছুদিন পর সুমাইয়ার বাবা মাসুদুর রহমান পরামর্শ দিলেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আই ব্লকের মাঠ খালিই থাকে, চাইলে সেখানে গিয়ে একা একা খেলা যেতে পারে। ব্যাস, ফুটবলপ্রিয় মেয়েটির খুশি আর দেখে কে। তার ভাষ্য, ‘ফুটবল ছাড়া আসলে আমি থাকতে পারি না। একা একা হলেও অনেক দিন পর আবার মাঠে গিয়ে খেলতে পারব, ভেবেই ভালো লাগছিল।’ 

মাঠে গিয়ে টুকটাক অনুশীলন শুরু হলো, সঙ্গে ফ্রিস্টাইল তো আছেই। শখ করে সেই ফ্রিস্টাইলের ভিডিও ফেসবুকে দিয়েছিল সুমাইয়া। প্রথম ভিডিওটাই সবাই বেশ পছন্দ করল। ফুটবল মাঠের বন্ধুরা শুভকামনা জানিয়ে শেয়ার করল। এরপর থেকেই নিয়মিতই ভিডিও দিচ্ছে সে। সাড়াও পড়ছে বেশ। সুমাইয়া ভিডিও দেখে অনেকে মেসেজ পাঠায়, জানতে চায়, কীভাবে ফ্রিস্টাইল শেখা। সুমাইয়াও তার নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নেয়।

টুকটাক অনুশীলন আর মূলত ফ্রিস্টাইল করে প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘাম ঝরাচ্ছে সুমাইয়া। বলল, ‘ফিটনেস ধরে রাখার জন্য ফ্রিস্টাইল খুব কাজের। আর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বাসার ভেতরেই অনুশীলন করা যায়। মাঠে যাওয়ার দরকার নেই। বারান্দা, ছাদ এমনকি ঘরের এক কোণেও অনুশীলন হয়ে যায়।’

জানিয়ে রাখি, ফ্রিস্টাইলের সঙ্গে পরিচয়টা নতুন হলেও ফুটবলের সঙ্গে সুমাইয়ার বন্ধুত্ব সেই ছোটবেলা থেকে। মা মাতসুসিমা তমোমি জাপানের নাগরিক, বাবা বাংলাদেশের। সুমাইয়া মাসতুসিমার জন্মও জাপানে। দুই বছর বয়সে সে বাংলাদেশে আসে। ছোটবেলায় ভাইয়ের সঙ্গে ফুটবল খেলত। সেভাবেই শুরু। ২০১৮ সালে সুমাইয়ার নেতৃত্বে বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ আয়োজিত সেমস ফুটবল ফেস্টে চ্যাম্পিয়ন হয় তাঁর স্কুল। ওই টুর্নামেন্টে একাধারে সেরা খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ গোলদাতা ও সেরা ডিফেন্ডারের পুরস্কারও ছিল তার দখলে।

গত বছর মে মাসে ভারতে লিগামেন্টের অস্ত্রোপচারের পর থেকে প্রায় এক বছর মাঠের ফুটবলের বাইরে ছিল সুমাইয়া। চোট পাওয়ার আগে প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘণ্টা ফুটবল অনুশীলন আর দুই ঘণ্টা শরীরচর্চা করত সে। এখন সময়টা কাজে লাগাচ্ছে ফ্রিস্টাইল চর্চা করে। তার মতে, ঘরে থাকার এই সময়ে নিজেকে ফিট রাখার জন্য ফ্রিস্টাইল হতে পারে দারুণ সমাধান। 

ভবিষ্যতে জাতীয় দলের হয়ে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নামার স্বপ্ন তার। যদিও বাবা চান মেয়ে পেশায় একজন চিকিৎসক হোক। তবে সুমাইয়া বলল, ‘পেশা হিসেবে যেটিই বেছে নিই না কেন, ফুটবলকে সব সময় সঙ্গে রাখতে চাই।’