'পুরুষ বডিবিল্ডাররাও কটূক্তি করেন'
গতানুগতিক ধারার বাইরে গেলে ‘নানান কথা শুনতে হবে’—এমন ধরে নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন। তবে এবার যখন নিজ জগতের পুরুষ সহকর্মীদের তির্যক মন্তব্যে বিদ্ধ হয়েছেন, তখন আর চুপ করে থাকতে পারেননি দেশের প্রথম নারী বডিবিল্ডিং চ্যাম্পিয়ন অহনা রহমান।
বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদককে অবহিত করে প্রতিকার চেয়েছেন অহনা রহমান।
অহনা বললেন, ‘বাইরের লোকে বলে বলুক, কিন্তু বডিবিল্ডাররাই যদি বলেন, তাহলে এই ইন্ডাস্ট্রির সম্মান থাকে কোথায়? আজ আমি যদি প্রতিবাদ না করি, তাহলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে ভবিষ্যতে কখনো কোনো মেয়ে আসবে না বা আসতে পারবে না।’
অহনার অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি অনুষ্ঠান প্রচারকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে বিতর্ক শুরু হয় বডিবিল্ডারদের মধ্যে। ওই সময় পোশাক নিয়েও কথা হয়। যাঁরা মন্তব্য করেছেন, তাঁদের সঙ্গে ফেডারেশনের কথা হয়েছে। তাঁরা আর কখনো নারী বডিবিল্ডারদের পোশাক নিয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি তাই এখানেই মিটে গেছে।’
তবে অহনা জানিয়েছেন, ফেডারেশনের পক্ষ থেকে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। ভবিষ্যতে বডিবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিতে মেয়েদের পথকে সুগম করতে এ ধরনের মন্তব্যকারীদের শাস্তির মুখোমুখি করার মাধ্যমে নজির স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
অহনা রহমানের ভাই রায়হান রহমানও বডিবিল্ডার। মূলত, ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় দুই বছর আগে তাঁর এই জগতে প্রবেশ। গত বছরের ডিসেম্বরে নারী বডিবিল্ডারদের জন্য প্রথমবার আয়োজিত জাতীয় প্রতিযোগিতায় ৩০ জনের মধ্যে সেরা হন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী অহনা। পুরুষ বিভাগে তাঁর ভাই পান ব্রোঞ্জপদক।
সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ভাই-বোনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেই অনুষ্ঠানটি ইউটিউব থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে বিতর্ক শুরু করেন কয়েকজন পুরুষ বডিবিল্ডার। তাঁরা একপর্যায়ে অহনার বডিবল্ডিংয়ের পোশাকের প্রসঙ্গ টেনে অশালীন মন্তব্য করতে থাকেন।
নারীদের জন্য আন্তর্জাতিক বডিবিল্ডিং পোশাক থেকে কিছুটা সরে এসে পুরো দেহ ঢেকে থাকে—এমন পোশাক নির্ধারণ করে বাংলাদেশ বডিবিল্ডিং ফেডারেশন। দেশে বর্তমানে ৪০ জন নারী বডিবিল্ডার আছেন।
ফেসবুকে পুরুষ বডিবিল্ডারদের কেউ কেউ ‘বিডিতে আমরা বিকিনি ওমেন দেখতে চাই। বডি দেখতে না পারলে বডিবিল্ডার হয় ক্যামনে...লুল’সহ নানান বাজে মন্তব্য করেন। কেউ কেউ সরাসরি পোশাক নিয়ে বলেন যে দেশের নারীদের এ ধরনের পোশাক পরা
ঠিক নয়।
অহনা বললেন, ‘বাবা-মা ও ভাইয়ের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকায় আমি বডিবিল্ডিং নিয়ে মানসিকভাবে সব সময় শক্ত অবস্থানে ছিলাম। কারও বিরূপ মন্তব্যে আমি কষ্ট পাই না। কিন্তু এখন দেখছি আমার ইন্ডাস্ট্রির পুরুষেরাই আমাকে গ্রহণ করছেন না। ’
টেলিভিশনে অহনার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর দেখে আনন্দে কেঁদেছিলেন বাবা মো. হাফিজুর রহমান। তিনি মেয়েকে এমন হয়রানির শিকার হতে দেখে বিষণ্ন, হতাশ, ক্ষুব্ধ। মা আজিমপুরে রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রহিমা আফরোজ ও ভাই রায়হান রহমানও এ ঘটনার যথাযথ প্রতিকার চেয়েছেন।