প্রতিবাদের রং সাদা-কালো

পিনার গুলতেকিন।  ছবি: সংগৃহীত
পিনার গুলতেকিন। ছবি: সংগৃহীত

প্রকাশের ভাষা বদলায় দ্রুত। বর্ণবৈষম্যের আন্দোলন, স্বাস্থ্যসচেতনতা বা পরিবেশ রক্ষা দাবির সমর্থনে পাল্টে যায় প্রোফাইল ছবিটি। দুই সপ্তাহ হলো বিভিন্ন দেশের নারীরা নিজের সাদা-কালো ছবি প্রকাশ করছেন। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে লেখা উঠছে, অপরজনের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের কথা। কিন্তু চ্যালেঞ্জটি ঠিক কী, তা অনেকের কাছে অস্পষ্টই থেকে যাচ্ছে।

গত ১৬ জুলাই নিখোঁজ হয়েছিলেন তুরস্কের পিনার গুলতেকিন। ২১ জুলাই মেনতেসে শহরের এক ঝোপে কংক্রিটে চাপা দেওয়া অবস্থায় পাওয়া যায় ২৭ বছর বয়সী এ নারীর মরদেহ। এ ঘটনায় আটক গুলতেকিনের সাবেক এক বন্ধু হত্যার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। দুই সন্তানের জনক ওই ব্যক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন গুলতেকিন।

অর্থনীতির ছাত্রী ছিলেন গুলতেকিন। পড়ালেখা শেষে গভর্নর বা মেয়র হতে চেয়েছিলেন। ঈদে বাবার সঙ্গে বাড়িও ফিরতে চেয়েছিলেন। তবে বাবার সঙ্গে কফিনে বাড়ি ফিরেছে গুলতেকিনের মরদেহ। তিনি ছিলেন পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র শিক্ষিত।

বাবা সিদ্দিক গুলতেকিন সন্তান হত্যার বিচারের দাবিতে দেশের জনগণকে একত্র হওয়ার আহ্বান জানান। চলতি বছরের ছয় মাসে তুরস্কে নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন দেড় শতাধিক নারী। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তুরস্কে শিশু যৌন হয়রানিবিষয়ক একটি বিতর্কিত বিলের বিরুদ্ধে শুরু হয় আন্দোলন। হাজার হাজার মানুষের সেই বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল কয়েক দিন ধরে। বিতর্কিত সেই বিলে উল্লেখ ছিল, যেসব মেয়েশিশু যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হবে, তাদের বিয়ে করলে দায়মুক্ত হবেন দোষী পুরুষ ব্যক্তিটি। সমালোচকেরা প্রতিবাদে বলেছিলেন, বিল পাস অর্থ তুরস্কের অন্তত তিন হাজার শিশু নির্যাতনকারীর মুক্তির সুযোগ।

তুরস্কের মুগলা ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ইকোনমিকসের ছাত্রী গুলতেকিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে আবার পথে নামেন নারীরা। ইস্তাম্বুল, ইজমিরসহ সমগ্র দেশে শুরু হয় বিক্ষোভ। শুরু হয় নারী হত্যা বন্ধের দাবি। প্রতিবাদের জেরে কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয় সমাবেশ। এ সময় অন্তত ১৫ নারীকে পিটিয়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার আগেই হত্যার প্রতিবাদ হিসেবে ২১ জুলাই থেকে ইনস্টাগ্রামে শুরু হয় সাদা-কালো ছবি দিয়ে আন্দোলন। নারীবাদীরা ছবিতে হ্যাশট্যাগ দিয়ে লেখেন ‘অ্যাকসেপ্ট দ্য চ্যালেঞ্জ’। সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন জেনিফার অ্যানিস্টন, ইভা লংগরিয়া, এমনকি ইভানকা ট্রাম্পের মতো বিখ্যাত তারকা ও পরিচিতজনেরা। দ্রুতই পশ্চিমা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে যায় এই ট্রেন্ড। এমনকি ভারত-বাংলাদেশের যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে এই সাদা-কালো ছবি প্রকাশের ধারা। কিন্তু এর মধ্যে হারিয়ে যায় পেছনের গল্পটি। অনেকে নিজের সবচেয়ে সুন্দর সাদা-কালো ছবি পোস্ট করছেন আর ছবির প্রতিক্রিয়া বা কমেন্টেও ছবিটি কতটা সুন্দর, তা–ই প্রাধান্য পাচ্ছে। অথচ এই আন্দোলনের মূল কথা হচ্ছে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের ফলে হারিয়ে যাওয়া নারীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদ করা।

এর আগে ২০১৬ সালে ক্যানসার সচেতনতার জন্যও শুরু হয়েছিল সাদা-কালো ছবি বদলানোর ট্রেন্ড, যা দ্রুতই অপসৃত হয়েছিল। এবার তুরস্ক থেকে নতুন করে এই ধারা শুরু হলে তা ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে ঠিকই, কিন্তু মুছে গিয়েছে হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বক্তব্যটি। ফলে অনেক নারী নিজের ছবি পোস্ট করার পাশাপাশি গুলতেকিনের ছবি ও ছবির পেছনের গল্পটাও তুলে ধরছেন।