রিচার্ড বাখের 'ইলুশনস' সবচেয়ে প্রিয়

কাজী মনিরুল কবীর
কাজী মনিরুল কবীর

কৈশোরে পড়তে শুরু করেছিলাম সুকুমার রায়। তাঁর ছড়া, কবিতা, গল্প—সব পড়েছি। তারপর ভক্ত হলাম সত্যজিৎ রায়ের। তাঁর লেখাও এতটাই মুগ্ধতা নিয়ে পড়েছি, যা লিখেছেন, কিচ্ছু বাদ দিইনি। এভাবেই আমার সাহিত্যের প্রথম পাঠ শুরু। কিছুদিন পর শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়তে শুরু করলাম। রকিব হাসানের তিন গোয়েন্দাও বেশ ভালো লাগত। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের বেশ কয়েকটি বইও পড়েছিলাম। তবে সিরিয়াসভাবে কোনো লেখকের লেখা পড়া, সেটা ওই বয়সে ঠিক হয়ে ওঠেনি। সে সময় পাঠ্যবইয়ের ভেতরে লুকিয়ে গল্পের বই পড়তাম। ওই বয়সে এই ব্যাপার বোধ হয় সব পাঠকের ক্ষেত্রেই হয়। মনে আছে, একবার মায়ের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছিলাম!
ধীরে ধীরে প্রিয় বইয়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে অনেক বই। এর মধ্যে যে বইটির কথা সবার আগে বলব সেটি, রিচার্ড বাখের ইলুশনস। এটা একটি দর্শনধর্মী বই। আমাদের বিশ্বাস-অবিশ্বাস, আস্থা-অনাস্থা—এসব নিয়েই লেখা। বিষয় আর আঙ্গিকের দিক থেকে অসাধারণ একটি বই। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, প্রিয় বই কোনটি। ভাবনাচিন্তা ছাড়াই এই বইয়ের নাম বলি।
এখন উপন্যাস-গল্প তেমন একটা পড়া হয়ে ওঠে না। পড়ি আত্মজীবনী ও জীবনীগ্রন্থ। বিখ্যাত মানুষের জীবনের গল্প বেশ টানে। কখনো অনুপ্রেরণা পাই। কখনো কোনো আত্মজীবনী পড়তে বসে নিজের জীবনের সঙ্গে লেখকের কথাগুলো মিলিয়ে উৎসাহ পাই। কখনো কিছু আত্মজীবনী আমার দ্বিধা-উৎকণ্ঠার সময়ে প্রেরণা জোগায়।
জীবনীগ্রন্থের মধ্যে ভালো লেগেছে স্টিভ জবস বইটি। আবার মহাত্মা গান্ধীর জীবনীগ্রন্থও অসাধারণ! ভালো লেগেছে নেলসন ম্যানেন্ডার লং ওয়াক টু ফ্রিডম, আন্দ্রে আগাসির ওপেন: অ্যান অটোবায়োগ্রাফি, বব ডিলানের তারানটোলা, আইজক আসিমভের ইটস বিন অ্যা গুড লাইফ।
আরও একজনের আত্মজীবনী আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছে; তিনি কার্ট কোবেইন। তিনি ছিলেন একই সঙ্গে কবি ও নির্ভানা ব্যান্ডের গায়ক। তাঁর আত্মজীবনী দ্য জার্নালস বইটি অসাধারণ! পড়েছি মার্ক টোয়েন, হিটলার, চে গুয়েভারার জীবনী। আনন্দ পেয়েছি নিল আর্মস্ট্রংয়ের ফার্স্ট ম্যান: দ্য লাইফ অফ নিল এ. আর্মসস্ট্রং বইটি পড়ে।

রিচার্ড বাখ
রিচার্ড বাখ

প্রিয় লেখকের মধ্যে আরও আছেন নাসিম নিকোলাস তালেব। তিনি মূলত মনোবিজ্ঞানবিষয়ক বই লেখেন। ভালো লেগেছে ঝুম্পা লাহিড়ীর দ্য নেম সেক বইটি। তাঁর লেখায় একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য আমার চোখে পড়েছে। তিনি বাঙালির মনস্তত্ত্ব নিয়ে লিখতে বেশ পছন্দ করেন। অন্যদিকে, খালেদ হোসেইনির লেখা দ্য কাইট রানার বইটিও অসাধারণ। খুব সহজভাবে লেখা। কিন্তু বইটিতে ভাবার উপকরণ আছে অনেক। আফগানিস্তানের এক কিশোর, তার বেড়ে ওঠা, বাবার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, আফগানিস্তানের শ্রেণীবৈষম্য, যুদ্ধ—সবই আছে বইটিতে। এটি আফগানিস্তানের বাস্তবতার একটি গল্প।
এই ফাঁকে একটা কথা বলি। এ বছর থেকে আমি বই পড়ার ক্ষেত্রে একটি পরিকল্পনা করেছি। প্রতিবছর যেকোনো একটি বিষয় নির্দিষ্ট করব। তারপর সেই বিষয়ের যত বই হাতে পাব, সব পড়ে ফেলব। নতুন নতুন বিষয় পুরোপুরি আত্মস্থ করতেই আমার এই পরিকল্পনা। আর এ বছর বিষয় হিসেবে নিয়েছি ‘ডিজাইন থিংকিং’। বিষয়টি নিয়ে পড়তে বেশ ভালো লাগছে।
দিনের বেলা বই পড়ার সময় খুব একটা পাই না। মূলত ঘুমোতে যাওয়ার আগেই বই পড়ি। তবে এমনটাও হয়, কোনো একটি বই পড়তে খুব ইচ্ছে করছে, কিন্তু অবসর নেই! তখন সব কাজ ফেলে বইটি পড়তে শুরু করি। বই আমার এমনই এক বন্ধু!
অনুলিখন: সুচিত্রা সরকার