বদলানোর সাহস চাই

সাবিরুল ইসলাম, মার্চে বাংলাদেশ সফরে। ছবি: মুন রহমান
সাবিরুল ইসলাম, মার্চে বাংলাদেশ সফরে। ছবি: মুন রহমান

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ তরুণ উদ্যোক্তা, লেখক ও বক্তা সাবিরুল ইসলাম লিখছেন প্রথম আলোয়। ‘স্বপ্ন নিয়ে’তে প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর কলাম
একটি প্রশ্ন আমি সবাইকে করতে চাই। তুমি হয়তো এখন পড়াশোনা বা কাজ নিয়ে ব্যস্ত। যেখানেই থাকো না কেন, সাম্প্রতিক সময়ে নিজের জীবন সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কিছু কি করেছ? তা যা-ই হোক না কেন? নিজের শখের বশেই বা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কিছু?
তুমি জানো, আমাদের জীবনে নেই কোনো জাদু। কোনো কিছুই আমাদের হাতে দৈববাণীর মতো এসে পড়ে না। কিছু করতে হলে একটু হলেও কদম ফেলতে হয়। জীবনে সাফল্যের জন্য একটি পথের কথা বলতে চাই তোমাদের। নিজের সাফল্য দেখতে চাইলে নিজের সমাজ, দেশ আর বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বেচ্ছা-সেবামূলক কাজে নিজেকে যুক্ত করতে হবে। যার ফলে, নানা মানুষের সঙ্গে মিশে তুমি নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তৈরি করতে পারবে। নানা ধরনের সামাজিক কাজ তোমাকে অনেক কিছু শেখাবে। তুমি অনেক অভিজ্ঞতা লাভ করবে।
নানা ধরনের সামাজিক কাজে যুক্ত হতে চাইলে আমাদের বাবা-মা একটু হলেও আমাদের ওপর বিরক্ত হন। তাঁরা আমাদের ক্যারিয়ার আর পড়াশোনা নিয়েই ভাবেন বেশি। কিন্তু তোমার মনকে আরও দৃঢ় আর শক্তিশালী করতে সামাজিক কাজ করতেই হবে। নিজের পড়াশোনা আর কাজের ওপর ভারসাম্য রেখেই তোমাকে সামাজিক কাজে যুক্ত হতে হবে।
ভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজে অংশগ্রহণে নিজেকে বুঝতে শিখতে পারা যায়। এই সব কাজ তোমার লক্ষ্যপূরণে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তুমি পাবে সাফল্যের ছোঁয়া। তোমার ওপর সামাজিক কাজগুলোর ভালো প্রভাব তুমিই টের পাবে।
নারীদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ আমাদের সমাজব্যবস্থার কারণে একটু কঠিন। অভিভাবকেরা তাঁদের অংশগ্রহণ মেনে নিতে চান না। বাবা-মা চান তাঁর মেয়ে সফল হবে, বড় হবে, পড়াশোনা শেষ করবে। যখন তুমি নিজেকে সাফল্যের কাছাকাছি নিয়ে যাও, তখনই সমাজ নানা ধরনের বাধা-প্রতিবন্ধকতা আরোপ করে। তোমার হাত-পা আটকে দেয়। কিন্তু তার পরও দাঁতে দাঁত চেপে লেগে থাকতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। সামনের জীবনে কী কী বাধা আসবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করা চলবে না।
নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বদলানোর সাহস রাখতে হবে। যদি সমাজের প্রচলিত রীতিনীতির ওপরেই সবকিছুর জন্য ভরসা করতে হয় তাহলেই অনেক ভুল করার ঝুঁকি থাকে। দীর্ঘদিনের সামাজিক রীতিনীতি আমাদের মনে ভয় জন্মায়। কিন্তু সে ভয় দূর করতে হবে। সেই ভয় আর বাধা দূর করার সাহস দেখিয়েছিলেন আমাদের পূর্বপ্রজন্ম, যার কারণেই আমাদের দেশ আজ স্বাধীন। তাঁরা যদি বদলানোর সাহস না পেতেন, তাহলে কোনোদিন কি বাংলাদেশ জন্ম নিত!
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা জীবন আর সমাজে অনেক ভিন্নতা আনে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সমাজের সব নিয়মকানুন চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে হবে। নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে দাঁড়াতে হবে। সামাজিক চাপ আর বাবা-মায়ের দুশ্চিন্তার ভারই হোক না কেন, দাঁড়াতেই হবে।
শেষ করার আগে একটা কথা বলতে চাই। আমার সর্বশেষ লেখাটি ‘স্বপ্ন নিয়ে’তে প্রকাশের পরে অনেক খুদেবার্তা, ই-মেইল আর টুইট পেয়েছি। অনেক ব্যস্ততার কারণে সবগুলো বার্তার জবাব দেওয়ার সময় হয়ে ওঠেনি। কথা দিচ্ছি, অচিরেই সবার সঙ্গে যোগাযোগ করব। আর হ্যাঁ, বাংলাদেশে আমার প্রথম উদ্যোগের কাজ শুরু হচ্ছে অচিরেই। সেখানেও অনেকেই যুক্ত হতে পারবে।
সবাইকে পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা।
ইংরেজি থেকে অনূদিত