খেলা দেখি, সিনেমাও দেখি

খেলার দিনে বড় পর্দার সামনে দর্শকদের এমন ভিড় দেখা যায়। ছবি: অধুনা
খেলার দিনে বড় পর্দার সামনে দর্শকদের এমন ভিড় দেখা যায়। ছবি: অধুনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ বড় পর্দায় বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখাচ্ছে। মজার বিষয় হলো, খেলা শুরুর আগে ফুটবল নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র দেখানো হয় দর্শকদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে চলে এই আয়োজন।

খেলা শুরু হবে রাত ১০টায় অথচ টিএসসিতে জটলা সেই সন্ধ্যা থেকে। ঘড়ির কাঁটা সাতটা পেরোতেই রীতিমতো রাস্তা দখলের হিড়িক পড়ে গেল। রাজু ভাস্কর্যের সামনের বড় পর্দাটি ততক্ষণে চালু হয়ে গেছে। ঘোষণা এল, ‘প্রিয় দর্শক, এখন আমরা দেখব ম্যারাডোনা চলচ্চিত্রটি।’
এর পরই শুরু হলো ফুটবল জাদুকর ম্যারাডোনাকে নিয়ে তৈরি চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। পর্দার সামনে তখন কয়েক হাজার দর্শক। চলচ্চিত্র শেষ হওয়ার পর ১০ মিনিটের বিরতি। এরপর আবার সচল বড় পর্দা। শুরু হলো ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৪-এর আর্জেন্টিনা বনাম বেলজিয়ামের শেষ চারে ওঠার লড়াই। একটি শো শেষ করেই আরেকটি শোতে ডুবে গেল দর্শক। এ যেন এক টিকিটে দুই ছবি দেখার ব্যবস্থা! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনের দিকে বসানো বড় পর্দাটির এই চিত্র এখন বিশ্বকাপের ফিকশ্চার অনুসারে সব খেলার দিনেই দেখা যাচ্ছে।
আর্জেন্টিনার জার্সি পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনের বড় পর্দার শুরুর দিকে জায়গা করে নিয়েছেন সোহেল, বাপ্পি, রায়হান ও শাকিল। চার বন্ধুর এই দলটি খেলা দেখতে এসেছে রামপুরা থেকে। রায়হান বলেন, ‘বাসায় তো কম মানুষ থাকে। তাই বন্ধুরা মিলে বড় পর্দায় অনেক মানুষের সঙ্গে খেলা দেখতে চলে এসেছি। আগে এসে পড়ায় ভেবেছিলাম সময়টা কীভাবে কাটাব। এখানে এসে দেখলাম সিনেমা দেখানো হবে। আয়োজকদের বুদ্ধিটা ভালো লেগেছে।’
অনেকে পরিবারসহ এখানে এসেছিলেন খেলা দেখতে। রেহনুমা-তৌফিক দম্পতির কথাই ধরা যাক। ইফতারের পর বাসা থেকে বেরিয়েছেন গাড়ি নিয়ে। রাস্তার পাশে পার্কিং করে বসেছেন ফুটবল নিয়ে তৈরি সিনেমা দেখতে। এরপর খেলা দেখে বাসায় ফিরবেন। রেহনুমা বলেন, ‘অনেক রাতে খেলা হলেও এখানে দেখতে ঝামেলা হয় না। আগেও দুদিন এখানে খেলা দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা বলে নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হয় না। আমাদের মতো অনেকেই পরিবার নিয়ে বাইরে ঘোরার একটা উপলক্ষ পেয়েছে এই খেলার জন্য।’
কেউ কেউ আবার বেরিয়েছেন পুরোদস্তুর নিশাচর হয়ে। তারেক মাহমুদ, ফজলে রাব্বি আর সোহান তেমনই তিন ‘নিশাচর’। চলচ্চিত্র শেষে খেলা দেখবেন। এরপর যাবেন পুরান ঢাকায় সেহ্রি খেতে। সেখান থেকে আবার এসে খেলা দেখে পার্কে হাঁটাহাঁটি শেষে ভোরে বাসায় যাবেন।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে বড় পর্দায় খেলা দেখানোর পাশাপাশি চলচ্চিত্র দেখানোর এই আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ (ডিইউএফএস)। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও কয়েকটি এলাকায় বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছে বিভিন্ন সংগঠন। তবে ডিইউএফএসের এই আয়োজন একটু ব্যতিক্রম। ডিইউএফএসের সদস্য অনিক কান্তি সরকার বলেন, ‘আমরা বড় পর্দায় দর্শকদের বেশি সময় ধরে রাখতেই এই ব্যবস্থা করেছি। তাছাড়া সারা বিশ্বে ফুটবল খেলা নিয়ে যেসব চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে, সেটা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন দর্শকেরা। দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে সন্ধ্যায় খেলা শুরুর আগে ও মাঝরাতে দ্বিতীয় খেলা শুরুর আগে চলচ্চিত্র দেখানো হয়।’