ফুটবল বড় নিষ্ঠুর!

ইরেশ যাকের
ইরেশ যাকের

মেসির জন্য মায়া হয়। এমনিতেই বেচারা দলের জন্য গোল করতে করতে বা গোল বানিয়ে দিতে দিতে ক্লান্ত। খেলার পুরোটা সময় খেলতে হচ্ছে। প্র্যাকটিস করতে হচ্ছে। অধিনায়ক হিসেবে প্রেস কনফারেন্স করতে হচ্ছে।
সব মিলিয়ে মেসি আছে মহাবিপদে।এসবের ওপর এখন এসে পড়েছে নেইমারের জন্য প্রার্থনা করার ভারও। আর কত করবে একজন মানুষ? ওদিকে বাংলাদেশের চোখে মেসির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী নেইমার কিন্তু শুয়ে শুয়ে দিন কাটিয়ে দিচ্ছে। না। একদম মেনে নেওয়া যায় না। আমি ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুটোর একটাকেও সমর্থন করি না, তার পরও মেসির সঙ্গে নিয়তির এই প্রতারণা মেনে নিতে কষ্ট হয়।
অনেকেই মনে করেন যে ফুটবল সুন্দর খেলা। আমরা যারা লিভারপুল ও ইংল্যান্ডের মতো হতভাগা দলের সমর্থক, তারা জানি যে সুন্দরের পাশাপাশি ফুটবল নিষ্ঠুরও বটে। না হলে মেসির মতো কর্মঠ খেলোয়াড়ের দিন-রাত খাটতে হতো না, সেমিফাইনালে খেলার কষ্ট সহ্য করতে হতো না, সুয়ারেজের মতো বর্বর আরামের ছুটি উপভোগ করত না। মাঝেমধ্যে এই নিয়ে শ্রম আদালতে নালিশ করতে ইচ্ছা করে।
ফুটবলে নিয়তির নিষ্ঠুরতার আরও কিছু প্রমাণ দিই। এই যে মনে করেন ব্রাজিলের ফ্রেড। বয়স্ক একজন ভদ্রলোক। একবার মোচ রাখে, একবার কেটে ফেলে যৌবন ফিরে পাওয়ার প্রচেষ্টায়। বেচারা এই বিশ্বকাপে এত আপ্রাণ চেষ্টা করল দল থেকে বাদ পড়ার জন্য কিন্তু কোনোভাবেই বাদ পড়ল না। এই ঠকঠকে হাঁটু নিয়েও তার সেমিফাইনাল খেলতে হয়েছে। নিয়তি তাকে কাঁচকলা দেখিয়ে সিলভা আর নেইমারকে বিশ্রাম দিল, অথচ ফ্রেডের না জুটল পিঠে লাথি, না জুটল হলুদ কার্ড। স্কলারি তো নিজেও একজন বয়স্ক মানুষ। তিনিও যদি ফ্রেডের কষ্ট না বোঝেন, তাহলে কে বুঝবেন? আমি বুঝি না।
আরও আছে। প্রতি মৌসুমে হল্যান্ডের রবিন ফন পার্সি ব্যথা পায় এবং দুই-তিন মাস লিগে খেলতে পারে না। পার্সির ওলন্দাজ সহকর্মীরা তাদের ক্যাপ্টেনকে একটু বিশ্রাম দেওয়ার জন্য কতই-না চেষ্টা করল। দলভর্তি বাঘা বাঘা খেলোয়াড় নিয়ে কোস্টারিকার বিরুদ্ধে গোল করল না। রোবেন অতিরিক্ত সময়ে একবারও ডাইভ করল না। এমনকি গত মৌসুমে একটাও পেনাল্টি থামায়নি, এ রকম একজন গোলকিপারকে নামানো হলো পেনাল্টি শুটআউটের সময়। কিসসু লাভ হলো না। সেই বেচারা ফন পার্সির আবারও কষ্ট করতে হবে। নিয়তি তার পাকা চুলের দিকে একবারও তাকাল না।
শেষ করার আগে আইভরিকোস্টের ইয়াইয়া তোরে আর কোলো তোরের কথা বলি। বিশেষ করে ইয়াইয়া তার দলের হৃৎপিণ্ড। প্রতিটা খেলা জান-প্রাণ দিয়ে খেলে। প্রথম রাউন্ডে গ্রিসের সঙ্গে খেলার আগে দুই ভাই খবর পেল যে তাদের ছোট ভাই ইব্রাহিম ক্যানসারে মারা গেছে। দেশের কথা ভেবে তারা ভাইকে কবর দিতে গেল না। থেকে গেল ব্রাজিলে। অসাধারণ খেলার পরও আইভরিকোস্ট রেফারির একটা বিতর্কিত সিদ্ধান্তের জন্য ৯০ মিনিটের মাথায় বাদ পড়ল বিশ্বকাপ থেকে। সত্যিই, মাঝেমধ্যে ফুটবল অসম্ভব নিষ্ঠুর একটা খেলা।