এ দেশ থেকে ও দেশে

ক্রেডিট ট্রান্সফারের আগে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাচাই করে নিন। মডেল: রুশি। ছবি: অধুনা
ক্রেডিট ট্রান্সফারের আগে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাচাই করে নিন। মডেল: রুশি। ছবি: অধুনা

‘কাজটা যত সহজ ভেবেছিলাম, আসলে ততটা না। তবে শেষ পর্যন্ত অনেক খাটুনির পর স্বপ্ন পূরণ হলো।’ বেশ একটা তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন রুমানা জাহান। ২০১০ সালে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে চলে যান যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এসেক্সে। তাঁর কাছে শোনা গেল যাওয়ার আগের অভিজ্ঞতার কথা। ‘এইচএসসি পড়ার সময় থেকেই দেশের বাইরে পড়তে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। এইচএসসি পাস করে ভর্তি হয়ে গেলাম নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে। পড়াশোনার পাশাপাশি চলতে থাকল প্রস্তুতি। আমার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাজ্যে পড়ার। তাই পড়াশোনার বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম।’
রুমানার মতন আরও অনেক তরুণই ক্রেডিট ট্রান্সফার করে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার হিসাব-নিকাশ করছেন। তেমনই একজন ফারহানা ক্যামেলিয়া। ‘আমার বড় বোন অস্ট্রেলিয়া থাকেন, তাই প্রাণপণ চেষ্টা করছি অস্ট্রেলিয়ায় ক্রেডিট ট্রান্সফার করে চলে যেতে। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। বিষয়টি বেশ ঝামেলারই। বাংলাদেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ক্রেডিট ট্রান্সফার করাটা যতটা সুবিধাজনক, তার তুলনায় এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রেডিট ট্রান্সফার ততটা সহজ না। কারণ, দুই দেশের শিক্ষার পদ্ধতির মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে।’
কাজী আরেফিন বর্তমানে পড়ছেন লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটিতে। বছর তিনেক আগে সাউথ-ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্রেডিট ট্রান্সফার করে তিনি লন্ডনে চলে গেছেন। কিন্তু তাঁর কথা থেকে বোঝা গেল, লন্ডনে গিয়ে তাঁকে আবার প্রথম থেকেই শুরু করতে হয়েছে। ‘আসলে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে আমার খুব বেশি লাভ হয়েছে, সেটা বলা যায় না। এখানকার পড়াশোনার ধরনটা একেবারেই অন্য রকম, আমাদের দেশের মতো না।’ তবে সবার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এক রকম হবে না, এটাই স্বাভাবিক।
অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন জাগছে, দেশে স্নাতক প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের পড়াশোনা শেষ করে দেশের বাইরে গিয়ে সেই একই বিষয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষ থেকে ক্লাস শুরু করা যাবে কি না? এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ব্রিটিশ কাউন্সিলের এডুকেশন ইউকের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এম জহির উদ্দীন বলেন, ‘ক্রেডিট ট্রান্সফারের বিষয়টা আসলে সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপরে। আমাদের দেশের শিক্ষাপদ্ধতির সঙ্গে বাইরের দেশগুলোর কিছুটা অমিল তো আছেই। তখন হয়তো সরাসরি ক্রেডিট ট্রান্সফার করার সুযোগ থাকে না। কেউ যদি মনে করেন এখানে দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ে, তৃতীয় বর্ষে পড়ার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারবেন, সেটা কিন্তু না-ও হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস, একাডেমিক ফলাফল, আইইএলটিএস স্কোর বিবেচনা করে তারা সিদ্ধান্ত দেয় কোন লেভেলে ভর্তি নেবে।’ তবে সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়। দেশে পড়াশোনা শুরু করে, হঠাৎ মনে হলো ক্রেডিট ট্রান্সফার করে বিদেশে চলে যাই, হুট করে কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। অবশ্যই পরিকল্পনা করতে হবে।