সামাজিক যোগাযোগ নিয়ে পাঠকের মতামত

.
.

‘সামাজিক যোগাযোগ কি অসামাজিক করে দিচ্ছে?’ বিষয়টি নিয়ে অধুনার গত সংখ্যায় ছিল প্রতিবেদন। এ বিষয়ে পাঠকদের কাছ থেকে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছিল। সেখান থেকে কয়েকটি এবার প্রকাশ করা হলো।
ল্যাপটপ ও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হলো
ফ্রান্সের ব্রেস্ত শহরে আমার কর্মস্থান। গত রোজার শেষের দিকে কর্মস্থান থেকে স্বল্পকালীন ছুটি পেয়েছিলাম। ঘরে বসে বসে ছুটি কাটালে তো আর চলবে না, চলে গেলাম আমার শহর থেকে দুই ঘণ্টা দূরত্বের একটি শহরে। সেখানে আমার কিছু প্রিয় মানুষ থাকেন। এই মানুষদের সঙ্গ আমার ভালো লাগলেও আড্ডা জমছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যায়, কারও মুখে কোনো কথা নেই। কে যেন মুখে তালা মেরে রেখেছে। যে আড্ডা দেওয়ার জন্য এত কিছু, সেই আড্ডা কোথায়? আসলে জমবে কীভাবে? ল্যাপটপ, মুঠোফোনে সবাই যেন নিজের জগতে ডুবে ছিলেন। সামাজিকতার দরকার নেই, তাই বলে আড্ডার সময়ও যন্ত্রের কাছে বন্দী থাকতে হবে? সামনেই তো কাছের মানুষেরা। মুখোমুখি তো গল্প করা যায় তাঁদের সঙ্গে। উপায় না দেখে শেষমেশ ল্যাপটপ ও মুঠোফোনগুলো কেড়ে নেওয়া হলো। সে কারণে আমি মনে করি, সব সময় না, মাঝেমধ্যে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো আমাদের অসামাজিক করে দিচ্ছে বৈকি।

এস আই অপু

ব্রেস্ত, ফ্রান্স।

মানুষে মানুষে দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে

সামাজিক যোগাযোগকে যারা অসামাজিক বলে, আমার মনে হয় তারাই অসামাজিক। পৃথিবীর শুরু থেকে কিন্তু ভালো-মন্দ ছিল, এখনো আছে এবং থাকবে। তাই বলে পেছনে তাকালে তো হবে না। আজ থেকে প্রায় ১০-১৫ বছর আগেও একটি চিঠি পাঠাতে দীর্ঘদিন সময় লাগত। মানুষে মানুষে যোগাযোগ বেড়েছে। দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। এসব মাধ্যমের কারণে পৃথিবীর সব মানুষ যেন একই বৃত্তে আছেন। ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে মনঃসামাজিক বিষয়ে এসব মাধ্যমের গুরুত্ব রয়েছে। ফলে এর কার্যকরী দিকটা সম্পর্কে বেশি ভাবা উচিত।

সামাজিক মাধ্যমগুলো সহজাত প্রবৃত্তি বদলে হয়েছে

একদিক থেকে চিন্তা করলে ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো আমাদের চিন্তা করার পরিসরকে বাড়িয়ে দিয়েছে। দিয়েছে ছোট ঘটনায়ও নিজের ভাবনাকে প্রকাশ করার সুযোগ। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমগুলো বিশেষ করে ফেসবুকের বর্তমান যথেচ্ছ ব্যবহারের কথা চিন্তা করলে মনে হয়, এসব মাধ্যম আমাদের শুধু অসামাজিকই করে দিচ্ছে না, নৈতিক অবক্ষয়ের দিকেও ধাবিত করছে। আমরা ভা​েলা লাগা বা নিতান্তই শখের বশে আমাদের জীবনের অন্যতম প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ হিসেবে ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমকে এত বেশি ঠাঁই দিয়ে দিয়েছি যে, এর আসক্তির কুপ্রভাব আমাদের মনোজগতের সামাজিকতার সহজাত প্রবৃত্তিকেই বদলে দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমগুলোর বদৌলতে সরাসরি কথা বলা বা ভাবপ্রকাশের জায়গায়গুলোও বেদখল হয়ে গেছে।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজের নৈতিকতার জায়গাটায় একটু দুর্বলতা থাকলে শুধু অসামাজিক নয়, অধঃপতিত হওয়ারও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।  এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত রুচিবোধ ও বিবেচনাবোধের ইতিবাচক প্রয়োগ ঘটানো দরকার।    

সুমিত বণিক

কুমিল্লা।

সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। কারও কারও এসব মাধ্যমের ওপর বেশি নির্ভরশীল হওয়ার কারণে বাস্তবজীবনের সম্পর্কগুলোর ক্ষেত্রে অনেক উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ভার্চুয়াল-জীবন অনেক সময় কাছের মানুষগুলোকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। ফলে সুবিধা-অসুবিধা দুটোই হচ্ছে।

ইশরাত জাহান সিরাজী

(ফেসবুক থেকে)