'বাংলাদেশিদের সুনাম আছে, তারা কাজে আন্তরিক ও বিশ্বস্ত'

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান

মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ও বিশ্বের অষ্টম তেল উত্পাদনকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিদেশ থেকে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণে আমিরাতের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটি এ বছর নির্মাণ সেক্টরে বিনিয়োগ করছে ১.১ ট্রিলিয়ন দিরহাম (৩১৫ বিলিয়ন ডলার)।
২০২০ সালে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হবে ‘ওয়ার্ল্ড এক্সপো’। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এর সব অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারের কর্মযজ্ঞ। এই প্রকল্পে প্রায় তিন লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান হবে। মূল অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শেষ হলে শুরু হবে প্যাভেলিয়ন নির্মাণের কাজ। এ জন্যও প্রয়োজন হবে অনেক শ্রমিক। পাশাপাশি আবুধাবির পশ্চিম অঞ্চলে পুরোদমে চলছে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ।
এমন প্রেক্ষাপটে গত আগস্টে এই দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধের দুই বছর পূর্ণ হলো। এ জন্য দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন আমিরাতপ্রবাসী বাংলাদেশিরা।
আমিরাতের বিশাল এসব কর্মযজ্ঞে কোথাও নতুন বাংলাদেশি জনশক্তি নেই। ভিসা বন্ধ থাকায় তাঁরা এই কর্মযজ্ঞে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। সময়োচিত সফল কূটনৈতিক তত্পরতার মাধ্যমে ভিসার ব্যাপারে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হলে বাংলাদেশের শ্রমবাজারও এই কর্মযজ্ঞে অংশ নিতে পারত।
ভিসা-সংক্রান্ত এই সমস্যার কারণে আমিরাতপ্রবাসী সব বাংলাদেশি বেশ চিন্তিত। কিন্তু বাস্তবে দৃশ্যমান তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
অনেক দিন থেকে শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আমিরাত সফরে আসবেন। তখন শীর্ষ পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা হবে। সমস্যার সমাধানও হতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী কোন দিন আমিরাত সফরে আসবেন, সে তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।
গত ২৭ আগস্ট এই লেখক সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানের সঙ্গে কথা বলেন। আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের কার্যালয়ে এ সময় উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের দুই কর্মকর্তা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (প্রথম সচিব) ও লতিফুল হক কাজমি (শ্রম কাউন্সিলর)। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা হয় এ দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য সফর, ভিসা, ট্রান্সফার ও রিলিজ নিয়ে। তিনি জানালেন, শ্রমবাজার খোলার লক্ষ্যে আলোচনা চলছে। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথোপকথনের পূর্ণ বিবরণ:
প্রশ্ন: প্রবাসীদের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে আপনি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। শুরুটা হলো কীভাবে?
উত্তর: একপর্যায়ে বাংলাদেশিদের একটি অংশ অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। বিচারালয়, জেলখানা—সব জায়গায় অপরাধে এদের নাম আসে। অন্য দেশের লোকও আছেন। তবে এ ব্যাপারে আনুপাতিক হারে বেশি আসে আমাদের দেশের মানুষের নাম। এই ক্ষত এ-দেশীয়দের চোখে পড়ে। বিষয়টি উত্কণ্ঠার। দূতাবাস তখনই অপরাধপ্রবণতা কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমরা নেমে পড়ি মাঠে, তৃণমূল পর্যায়ে। এ জন্য আমরা অপরাধের উত্সমুখে যাওয়ার চেষ্টা করি। লিউর, শিলা, রেদা খায়েদের মতো মরুভূমির অঞ্চলগুলোর শ্রমিকপল্লিতে যাই। তাঁদের বোঝাতে চেষ্টা করি—এ পথ অন্ধকারের। পাশাপাশি আহ্বান করি, ‘এসো, দেশের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হই।’ তাঁরা দূতাবাসের আহ্বানে সাড়া দেন। অন্যায় কাজ পরিহার করেন। বাংলাদেশিদের সুনাম আছে। তাঁরা কাজে আন্তরিক ও বিশ্বস্ত। সেই ঐতিহ্যই তাঁদের টেনে এনেছে আলোর পথে।

প্রশ্ন: ভাবমূর্তির প্রশ্নে এখন উদ্বেগ কমেছে বলা যায়?

আমিরাতপ্রবাসী এক দল বাংলাদেশি শ্রমিক
আমিরাতপ্রবাসী এক দল বাংলাদেশি শ্রমিক

উত্তর: আগে প্রতিদিন খবরের কাগজসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অপরাধের খবর আসত। এখন এই সংখ্যা অনেক কমেছে।
প্রশ্ন: অবস্থার উন্নতি হলো। কিন্তু মানুষ তো ফল চায়। ভিসা চালুর পথটা কত দূরের?
উত্তর: দুই দেশের পক্ষ থেকেই কাজ করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ হচ্ছে। অনেকটা কাছাকাছি এসেছে দুই পক্ষ।
প্রশ্ন: দুই বছর হলো ভিসা বন্ধ। সমস্যা নিরসনে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা সম্ভব কী?
উত্তর: ভিসা বন্ধ—এ কথা পুরোপুরি বলা যায় না। গৃহপরিচারিকার ভিসা এখনো সচল। আমিরাতের ফ্রি জোনে বাংলাদেশিরা আসছেন। এই মুহূর্তে ভিসা-সংক্রান্ত ব্যাপারে এর চেয়ে বেশি বললে হয়তো বা আলোচনার অগ্রগতি প্রভাবিত হতে পারে। দেখে থাকবেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রতিনিধিদল গেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ থেকেও আসবে অনুরূপ।
প্রশ্ন: তাহলে প্রধানমন্ত্রীর আগমন নিকটবর্তী?

উত্তর: বিষয়টা পর্যায়ক্রমিক। (এ সময় উপস্থিত দুই কর্মকর্তা প্রায় সমান সুরে একই কথা বললেন।) আলোচনা হচ্ছে প্রতিদিন। একইভাবে কাগজপত্রও চালাচালি চলছে। আমরা তো ভালো কিছুই চাচ্ছি। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক গভীর। তাদের লোক প্রয়োজন। দুই দেশের প্রয়োজনেই আমরা একে অন্যের কাছাকাছি আসতে পারব।

আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও।
নিমাই সরকার
আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত