রক্ত ঘামের মুখ-ছয়

মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন
মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন

মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার কালিকাপুরের বাসিন্দা। আবুধাবিতে টেকনিক্যাল পার্টস কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি ওই কোম্পানির গাড়িচালক। অয়েল ফিল্ডে ব্যবসা এদের। নাজিমুদ্দিন লোকজনের আনা নেওয়ার কাজটি করেন। তিনি অন্য কোম্পানি থেকে এই কোম্পানিতে আসেন ১৭ বছর আগে। তখন কিছুটা কষ্টে ছিলেন।

এখন নাজিমুদ্দিন সুখী। বলেছিলেন, ওভারটাইমসহ মাসে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার দিরহাম বেতন আসে। দুই বছর অন্তর আসা যাওয়ার বিমান টিকিট এবং তার সঙ্গে আরও পান দুই মাসের বেতন। ইউএই এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে টাকা পাঠান দেশে।

দেশে তিন ভাইয়ের একান্নভুক্ত সংসার। নিজের দুই সন্তান। মেয়েকে ইন্টারমেডিয়েট পাশের পর বিয়ে দিয়েছেন। জামাই কুয়েতে থাকেন। তাঁদের পরিবারের ব্যবসা আছে সেখানে। নাজিমুদ্দিনের ছেলে এবার এইচএসসি পাশ করেছে। জিপিএ ৩.৭ পেয়েছে। ছেলের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছে।

নাজিমুদ্দিন জানালেন, তাঁদের জমি আছে ছয় একর। বোঝা গেল তিনি কিছুটা সচ্ছল ঘরের সন্তান। দেশে তিনি একটি বাড়ি করেছেন ২০০২ সালে। বললেন, এটা তাঁর শখের অর্জন। দেশ ও নিজ গ্রামের প্রতি তাঁর বড় আকর্ষণ। দরদও কম নয় ভাইদের প্রতি। বললেন, তাঁদের জন্যই গ্রামেও তাঁর বাড়ি করা। ২০১২ সালে নির্মিত হয়েছে সে দালান।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা কি? দেশে গিয়ে কী করবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে নাজিমুদ্দিন জানালেন তাঁর আশার বার্তা। দুটো পুকুর আছে, মাছের খামার করবেন তিনি।
এ ছাড়া বাড়িতে যোগাড় করা হয়েছে নির্মাণ কাজের জন্য সেন্টারিংয়ের মালসামানা। জানালেন, তাঁর সহোদরেরা ইতিমধ্যে এগুলোর ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন। তিনি পরবর্তীতে যুক্ত হবেন তাঁদের সঙ্গে।
নাজিমউদ্দিন কষ্টের দিন পেছনে ফেলে এসেছেন। এ জন্য ঈশ্বরের প্রতি তাঁর হাজার শোকরিয়া। তিনি এইচএসসি পাশ করেছেন ১৯৮২ সালে। কুমিল্লা বোর্ড থেকে। একই বোর্ডের দুধমাখা হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছিলেন। বসুরহাট ছিল পরীক্ষার কেন্দ্র। আন্তরিকতার সঙ্গেই এসব তথ্য দিলেন তিনি।
এতক্ষণ তাঁর কোম্পানির অফিসের সামনে কথা হচ্ছিল। এবার গাড়িতে উঠে সুইচ অন করলেন। মিনিবাসটি এবার রওনা দিল অয়েল ফিল্ডের দিকে।
তখন মনে মনে কামনা করলাম, দুধমাখা স্কুলের নামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভারত চন্দ্রের সন্তানের মতো তিনিও যেন থাকেন দুধে ভাতে।
নিমাই সরকার
আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত