শিরিনের স্বপ্নের সঙ্গে...

শিরিন আকতার
শিরিন আকতার

শেখ আবদুল মজিদ ও আঙ্গুরা বেগমের চার মেয়ে। চার মেয়েকে নিয়ে তাঁদের অনেক স্বপ্ন ছিল। তবে সেই স্বপ্ন ‘ভালো ঘরে বিয়ে দেওয়া’। আর সেখান থেকেই এসেছেন বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী। দেশ-সেরার মুকুট এখন তাঁর মাথায়। মা-বাবার সেই স্বপ্নকে নড়বড়ে করে দিয়ে সাফল্যের মুকুট মাথায় করে এগিয়ে চলছেন শিরিন আকতার।

অবশ্য গতির সঙ্গে যুদ্ধ করা এই মেয়েটিকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি! যুদ্ধটা ছোটবেলাতেই শুরু হয়েছিল তাঁর। সেই সাতক্ষীরা দহখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ার সময় থেকে। ওইটুকুন বয়সে শিরিন নাম লেখান স্কুলের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। দৌড়, হাইজাম্প, লংজাম্প থেকে শুরু করে স্কুলের নানা ধরনের খেলাধুলার সঙ্গে নিত্য দেখা-সাক্ষাৎ ঘটে তাঁর। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার দিন হাতভর্তি পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। তবুও মা-বাবার ভয়—তাঁদের সেই স্বপ্নভঙ্গ হবে না তো! এ কারণেই খেলাধুলার ওপরে নিষেধাজ্ঞা আসে।

শিরিন পুরোনো কথা মনে করে খানিকটা বিচলিত হন। ‘জানেন, এমনও হয়েছে দুপুরবেলা মা-বাবার সঙ্গে ঘুমিয়েছি। তাঁরা ঘুমিয়ে পড়লেই, আমি চুপিচুপি উঠে পড়েছি। দরজা ডিঙিয়ে বাইরে এসে জানালায় দাঁড়িয়েছি, তখনই আমার বড় বোন জানালা দিয়ে খেলার পোশাক পার করে দিয়েছে। পোশাক হাতে সোজা নানুবাড়ি। আমার সৌভাগ্য নানুবাড়ির কাছেই ছিল। সেখানে পোশাক পরিবর্তন করে মাঠে দৌড়। এভাবে কত দিন যে লুকিয়ে লুকিয়ে মাঠে গিয়েছি তার হিসাব নেই। আমার জন্য বড় বোন পর্যন্ত বকা খেয়েছে।’ বলেন শিরিন।

একসময় খেলাধুলাই ভাগ্য ফিরিয়ে দেয় শিরিনের। প্রাথমিক স্কুল পার করে ভর্তি হন সাতক্ষীরার একটি মাধ্যমিক স্কুলে। সেখান থেকে সোজা বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি)। ভর্তি হওয়ার সময়ও মা-বাবা চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু শিরিনের ধারাবাহিক সাফল্য আর তাঁর বড় বোন, ছোট মামা ও নানির কথার ওপরে কথা বলতে পারেননি। তাই ২০০৭ সাল থেকেই শিরিনের ঠিকানা হয় বিকেএসপি। সেখান থেকেই অংশ নেন বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা খেলোয়াড়ের কৃতিত্ব তাঁর দখলে ছিল। মাঝখানের এক বছর বাদ দিয়ে আবার ২০১২ সালে সেরা হন শিরিন। ২০১৩ সালে অংশ নেন বাংলাদেশ গেমসে। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন ১০০ ও ২০০ মিটার দৌড়ে। ২০১৪ সালে এখন পর্যন্ত অংশ নেন দুটি প্রতিযোগিতায়। একটি ৩৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকস ও ১২তম জাতীয় সামার অ্যাথলেটিকস। প্রতিটি প্রতিযোগিতার ১০০ মিটার স্পিন্টে সোনা জয় করে দ্রুততম মানবীর খেতাব জয় করেন তিনি। বর্তমানে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে। তাদের হয়েই খেলবেন সামনের দিনগুলোতে। এইচএসসি পাস করেছেন বিকেএসপি থেকে। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি শিরিনের স্বপ্ন অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়া। শুধু অংশই নয়, দেশের হয়েই সেরা হতে চান সাতক্ষীরার এই মেয়ে। শিরিনের সেই স্বপ্নের সঙ্গে এখন হেঁটে চলেছেন তাঁর পরিবার, সাতক্ষীরা ও বাংলাদেশের মানুষ।