এটা চাই, ওটা চাই

শিশু তো আবদার করবেই। কিন্তু অভিভাবককে বুঝেশুনে আবদার মেটাতে হবে। মডেল: রীতা ও সহী। ছবি: অধুনা
শিশু তো আবদার করবেই। কিন্তু অভিভাবককে বুঝেশুনে আবদার মেটাতে হবে। মডেল: রীতা ও সহী। ছবি: অধুনা

এটা চাই, ওটা চাই; না দিলে রক্ষা নাই। ‘অমুকের আছে, আমারও লাগবে...’ এ কথা শোনার পর না পেলে ‘তমুকের আম্মু ভালো, একবার চাইলেই এনে দেয়’, ‘তোমরা তো আমাকে ভালোই বাসো না, আমি তোমাদের ছেলে না’—এ রকম অভিমানী বাক্যালাপ। শেষ পর্যন্ত না পেলে কান্নাকাটি, ভাঙচুর আর চিৎকার শুরু হয়। একটি শিশুর দিক থেকে এতে দোষের কিছু নেই। সে নতুন কিছু, পছন্দের কিছু দেখলে পেতে চাইবে; এটাই স্বাভাবিক। কখনো আবার বিপাকে পড়ে মা-বাবারা কঠোর হতে গিয়ে শিশুর প্রতি এমন আচরণ করে বসেন, যেটির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিশুমনে। শিশুর এ রকম সমস্যার কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক নাজমা খাতুন। শিশুরা কৌতূহলী। সব সময় নতুনের প্রতি তাদের আগ্রহ থাকে। তাই যা দেখে, তা-ই চেয়ে বসে। ওর সমবয়সীদের কারও সে জিনিসটি থাকলে তো আর কথাই নেই। নাজমা খাতুন বলেন, ‘একটি শিশু যখন থেকে বুঝতে শেখে, তখন থেকেই মা-বাবাকে তাকে একটি অভ্যাসের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে; যাতে শিশুটি ধীরে ধীরে বুঝতে শেখে তার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির জায়গা কতখানি হবে। শিশুকে আদরে বড় করার মানেই কিন্তু তার সব চাওয়া পূরণ করা নয়। তাকে তার জীবনে চলতে একটি পথের ঠিকানা খুঁজে দেওয়ারও দায়িত্ব মা-বাবার। তাই কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না শিশুর অন্যায় আবদারকে। কারণ, একবার যদি সে বুঝে যায়, কান্নাকাটিকে সে কোনো কিছু পাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুরু করবে।’

শিশু যদি অন্যায় আবদার করেই বসে, তাহলে তার সঙ্গে হঠাৎ কোনো রূঢ় আচরণ না করে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। কেন বিষয়টি সে পেতে পারে না, সেটি শিশুমনের উপযোগী করে ব্যাখ্যা করতে হবে। তার চাওয়াটিকে অবহেলা না করে তাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে। এতে সে ধীরে ধীরে বিষয়টি বুঝতে পারে। শিশুর বায়নার মধ্যে খেলনা, খাবার, স্টিকার বিভিন্ন কিছু থাকতে পারে। একটি শিশু ঘরে যে আচরণ করে, বাইরে গিয়েও সে রকম আচরণ করে। তাই শিশুকে শেখানোর সবচেয়ে উত্তম জায়গা হচ্ছে পরিবার। পরিবারে মা-বাবাকে অবশ্যই শিশুকে আলাদাভাবে সময় ও মনোযোগ দিতে হবে। আদরের ছলে যেন অতি আদর না দেওয়া হয়ে যায়, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

শিশু দোষ করলে পরিমিত শাসন করতে হবে। তাহলে সে বুঝে নিতে শিখবে কিছু কিছু কাজের জন্য শাস্তিও রয়েছে। পাশাপাশি শিশু ভালো কিছু করলে তাকে প্রশংসা করতে হবে। এর উপহারস্বরূপ আপনার সাধ্যের মধ্যে থাকা তার প্রিয় কোনো খেলনাও দিতে পারেন। এতে শিশুর নেতিবাচক আচরণটি ধীরে ধীরে কমে যাবে। সে বুঝবে, ভালো কাজের পুরস্কার রয়েছে।