একদিনে সাগরে পাঁচশ জনকে হত্যা!

মেডিটেরিয়ান সাগর। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মেডিটেরিয়ান সাগর। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

গত ১৬ সেপ্টেম্বর, আন্তর্জাতিক মাইগ্রেশন সংস্থা (আইওএম) তাদের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার প্রাক্কালে দালালচক্র সাগরেই নৌকা ডুবিয়ে ইচ্চাকৃতভাবে প্রায় পাঁচশ জনকে হত্যা করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ বছর এ পর্যন্ত অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার সময় প্রায় তিন হাজারের মতো মানুষ মারা গেছেন। মৃত্যুর এই হার ২০১৩ সালের তুলনায় চারগুণ বেশি।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর আইওএম-এর মহাপরিচালক উইলিয়াম লুসি বলেন, মৃতের সংখ্যা খুবই বেদাদায়ক এবং অগ্রহণযোগ্য। তার মতে, মৃতদের মধ্যে নারী-পুরুষ-শিশু-যুবকসহ সকল স্তরের লোক রয়েছেন, যারা কেবলমাত্র একটি ভালো জীবনের আশায় উন্নত দেশে যাওয়ার জন্য ঝুঁকি নিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের ভাগ্যের নিয়তির পরিহাসের কাছে হার মানতে হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে জানা যায়, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, সুদান, মিশরী ও আফ্রিকান নাগরিকেরা দালালদের মাধ্যমে মিশর হয়ে ইউরোপ পাড়ি দিয়েছিলেন। তাঁরা একটি বড় নৌকায় মিশর থেকে যাত্রা করেন। মেডিটেরিয়ান সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে ওই বড় নৌকা থেকে ছোট নৌকায় স্থানান্তরিত হতে অস্বীকৃতি জানালে দালালদের সঙ্গে তাঁদের বাধানুবাদ বেঁধে যায়। এক পর্যায়ে দালালেরা লোক ভর্তি ওই বড় নৌকা সাগরে ডুবিয়ে দেয়। তাঁদের বেশির ভাগই সাঁতার জানতেন না। উত্তাল সাগরের পানিতে তাঁরা তলিয়ে যান। মাত্র নয় জনের মতো ভাগ্যক্রমে তীরে পৌঁছান। তাঁদের একজনের কাছ থেকে আইওএম এই তথ্য প্রথমে জানতে পারে। তিনি ফিলিস্তিনের নাগরিক ছিলেন।

মেডিটেরিয়ান সাগর। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মেডিটেরিয়ান সাগর। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বেঁচে যাওয়া নাগরিকরা জানান, মাঝ পথে বড় নৌকা থেকে ছোট নৌকায় পাড়ি দেওয়াকে কেন্দ্র দালালদের সঙ্গে তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে দালালেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ছোট নৌকার সাহায্যে বড় নৌকাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে একেবারে ফুটো করে ফেলে। ফুটো দিয়ে পানি উপচে পড়ে নৌকায়। এক সময় নৌকা সাগরে তলিয়ে যায়। কিন্তু ঐ নিষ্ঠুর দালালরা তাঁদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা দূরে থাক, ছোট ছোট নৌকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে আইওএম এই খবর পাওয়ামাত্র কোস্ট গার্ডের সহায়তায় মেডিটেরিয়ান সাগরে অনুসন্ধান তৎপরতা শুরু করে। ডুবুরিরা নৌকাডুবির স্থানে ১১ নটিক্যাল মাইল এলাকায় অনুসন্ধান চালান। তাঁরা কয়েকজনের লাশ উদ্ধার এবং ৩৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন। এঁদের মধ্যে তিনজন মহিলা ছিলেন। একজন মহিলা গর্ভবতী ছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পাঁচশ জনকে ডুবিয়ে মারার ঘটনার পর আরেকটি নৌকায় সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় ৩৮৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ইউরোপের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ ঘটা করে প্রচার করেই সমুদ্রে ও সীমান্ত এলাকায় নৌ পর্যবেক্ষণসহ কোস্ট গার্ড বাড়ানো হয়েছে। অথচ এক শ্রেণীর দালালেরা অসহায় মানুষদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিদেশের স্বপ্নের জীবনের লোভে ফেলে কোনো রকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করেই ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে সাগর পাড়ি দেয়। এরা এতো নিষ্ঠুর ও লোভী যে, আগে ভাগে লোকজনের থেকে সব টাকা পয়সা পাই পাই করে নিয়ে নেয়। একজন লোক নিজের সব কিছু দালালের কাছে দিয়ে অসহায়ের মতো দালাল নামক ভয়ানক মানুষরূপি হায়েনাদের হাতের পুতুল হিসেবে হুকুম তামিল করে চলেন। এই দালাল চক্র কখনো সাগর পাড়ি, কখনো জন্তু-জানোয়ারের লরিতে একই খাঁচায় করে আবার কখনো গ্যাস বা পানীয়জাত সামগ্রী পরিবহনের ট্যাংকারে করে পাড়ি দেওয়ার মতো জঘন্য ও অমানবিক পন্থা বেছে নেয়। মানুষরূপী এই দালাল চক্রের এজেন্ট বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এদের ব্যাপারে সহজ সরল জনগণকে সজাগ করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য