'অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম হলো ছবি'

ইফ্ফাত আরা দেওয়ান যখন ক্যানভাস, রং–তুলিতে মগ্ন। ছবি: খালেদ সরকার
ইফ্ফাত আরা দেওয়ান যখন ক্যানভাস, রং–তুলিতে মগ্ন। ছবি: খালেদ সরকার

তাঁরা আমাদের খুবই পরিচিত। যেভাবে আমরা তাঁদের চিনি, এর বাইরেও রয়েছে তাঁদের ভিন্ন জগৎ। আসুন, সেই জগতে ঘুরে এই চেনা মানুষগুলোকেই এবার দেখি একটু অন্য আলোয়

ছোটবেলা থেকে ছবি আঁকাআঁকিটা ছিল নেশার মতো। হলিক্রস স্কুলের ছাত্রী ছিলাম। স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক ছবি আঁকার ক্লাস নিতেন। তাঁর কাছেই একটু-আধটু যা শিখেছি। এরপর বিশ্বখ্যাত চিত্রকরদের কাজ দেখে, বিভিন্ন বইপত্র পড়ে শিখেছি ছবি আঁকার কৌশল। ভালো লাগে শিল্পী জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী, মনিরুল ইসলামের কাজ। দেশের বাইরে প্রিয় শিল্পী আউগুস্ত রেনোয়া আর কািমল পিসারো। ১৯৯২ সালে ছবি অাঁকা বিষয়ে লন্ডনের একটি প্রতিষ্ঠানে নয় মাসের ফাউন্ডেশন কোর্সে ভতি হয়েছিলাম। কিন্তু সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারায় দুই মাস পর ফিরে আসি দেশে।

ইফ্ফাত আরা দেওয়ানের অাঁকা ছবি
ইফ্ফাত আরা দেওয়ানের অাঁকা ছবি

অনুপ্রেরণায় ওয়াহিদুল হক
১৯৬৬ সালে ভর্তি হই ছায়ানটে। সেখানে ওয়াহিদুল হক স্যারকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। ক্লাসে শুধু গানই নয়, সব বিষয় নিয়ে কথা বলতেন তিনি। কীভাবে একজন শুদ্ধ মনের মানুষ হয়ে ওঠা যায়, এই শিক্ষাটা তাঁর কাছেই পেয়েছি। আমার ছবি আঁকার আগ্রহ দেখে সব সময়ই তিনি আমাকে বিশ্বখ্যাত সব চিত্রকরের সাধনার গল্প শোনাতেন । দেখাতেন দারুণ সব পেইন্টিং। আজকের যতটুকু এই আমি, তার পুরোটাই ওয়াহিদুল হকের অবদান।

প্রথম প্রদর্শনী
১৯৯০ সালে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে একটি এলপি (লং প্লে) বের হওয়ার কথা চলছিল। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপিত আবুল খায়ের লিটু বললেন, এলপির প্রচ্ছদে আপনার আঁকা ছবি ব্যবহার করতে চাই। প্রচ্ছদের জন্য বেশ কয়েকটা ছবি এঁকেছিলাম তখন। একটি ছবি ব্যবহার করেছিলেন তিনি। বাকি ছবিগুলো দিয়ে লিটু ভাই ১৯৯২ সালে গুলশানের জার্মান কালচারাল সেন্টারে আয়োজন করলেন আমার প্রথম একক চিত্রপ্রদর্শনী।

ভালোবাসার শহরে
ছবির মতো সুন্দর শহর প্যারিস। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে জানে এখানকার মানুষেরা। চিত্রপ্রদর্শনী বা গানের মতো সংস্কৃতিচর্চার বিষয়গুলো প্যারিসের শ্রোতারা মনোযোগ দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে। এই বিষয়গুলো আমাকে খুব টানত। প্যারিস প্রবাসী বন্ধু নীলুফার জাহানের সঙ্গে পরিচয় ছিল সেখানকার অ্যাটলিক অ্যাডজাক গ্যালারির মালিক মার্গেট ক্রোথারের। সেই সূত্রেই ২০০৪ সালে প্রিয় শহর প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় আমার ছবির প্রদর্শনীর। এটি আমার জীবনে অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা। এরপর প্যারিস ছাড়াও সিঙ্গাপুর ও ঢাকায় আমার ১১টি একক চিত্রপ্রদর্শনী হয়েছে।

ছবিতে ভাবনার প্রকাশ
আমার কাছে মনে হয়, নিজস্ব অনুভূতি প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হলো ছবি। আমার আঁকা প্রতিটি ছবির পেছনেই লুকিয়ে থাকে তেমন কিছু একান্ত অনুভূতির কথা। সেই ছবিগুলো যখন কোনো প্রদর্শনীতে নিয়ে যাওয়া হয় তখন মনে হয় কী যেন হারিয়ে গেল আমার। কেমন যেন হাহাকার চলতে থাকে মনের ভেতর। ছবিগুলো বিক্রি হলে ভালো তো লাগেই। কিন্তু তারপরও মনে হয়, এত যত্নে করা কাজটা তো হারিয়ে গেল!

অনুলিখন: বিপাশা রায়