ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছেন রুশনারা

ব্রিটেনের পার্লামেন্ট। বিতর্ক চলাকালে তোলা ছবি
ব্রিটেনের পার্লামেন্ট। বিতর্ক চলাকালে তোলা ছবি

মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন জোটের বিমান হামলায় ব্রিটেনের শরিক হওয়ার প্রশ্নে পার্লামেন্টে (হাউস অব কমন্স) ২৬ সেপ্টেম্বর বিতর্ক ও ভোটাভুটি হয়। পার্লামেন্টের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাংসদ (এমপি), ফ্রন্ট বেঞ্চার ও লেবার দলের ছায়া শিক্ষামন্ত্রী রুশনারা আলী এ বিতর্কে অংশ নিয়ে বিপক্ষে অবস্থান নেন। অবশ্য ভোটাভুটিতে তিনি বিরত ছিলেন। পরে ছায়া মন্ত্রিসভা থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। এ ঘটনা ব্রিটেনে যথেষ্ট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

রুশনারা আলী
রুশনারা আলী

কেন পদত্যাগ করেছেন, সে বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন রুশনারা আলী। এ ছাড়া পদত্যাগের আগে বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আইএস (ইসলামিক স্টেট) একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। এরা মানুষ হত্যা করছে। মুসলমানদের হত্যা করছে। সাংবাদিক ও চ্যারিটি ওয়ার্কারদের জিম্মি করে হত্যা করছে। এদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া মানেই ইসলামের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নয়। তবে আইএসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমাদের অতীতের ইরাক যুদ্ধের অংশগ্রহণ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’
রুশনারা আলী ব্রিটেনের বেথনাল গ্রিন বো আসন থেকে নির্বাচিত সাংসদ। এই এলাকায় একনাগাড়ে দীর্ঘ ৪০ বছর সাংসদ ছিলেন লেবার দলের পিটার শো। তিনি বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। অনেক বাংলাদেশি তাঁর বন্ধুও ছিলেন। তিনি যুদ্ধবিরোধী একজন নেতা।
বেথনাল গিন বো আসন মূলত বাঙালি ভোটার-অধ্যুষিত এলাকা। রুশনারা আলীর আগে লেবার ও কনজারভেটিভ, কোনো দলই এই আসনে বাঙালি প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি। পিটার শোর পরে লেবার দল মনোনয়ন দেয় ওনা কিংকে। তিনিও বাংলাদেশিদের ভোটে নির্বাচিত হন। ইরাক যুদ্ধের সময় টনি ব্লেয়ারকে সমর্থন দিলেও তাঁর আসনের ভোটাররা এর বিরুদ্ধে ছিলেন।
সাধারণত ব্রিটেনে কোনো আসনের সাংসদ তাঁর নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের মনোভাবের বিরুদ্ধে যান না। এ দেশের পার্লামেন্টের ইতিহাস তাই বলে। ওনা কিং ইরাক যুদ্ধে টনি ব্লেয়ারকে সমর্থন করায় পরবর্তী নির্বাচনে পরাজিত হন। বাঙালি ভোটারদের ভোটে এই আসন থেকে অখ্যাত জর্জ গ্যালওয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হন। রুশনারা আলী সেটা জানেন। সম্ভবত তা থেকে তিনিও শিক্ষা নিয়েছেন।

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের মন্ত্রিসভার প্রভাবশালী সদস্য ও ফরেন সেক্রেটারি ছিলেন রবিন কুক। তিনি লেবার দলেরও একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। যুদ্ধবিরোধী হিসেবে দেশে ও বিদেশে তাঁর ব্যাপক সুনাম ছিল। টনি ব্লেয়ার ইরাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে রবিন কুক প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর পদত্যাগ ছিল নীতিগত এক সিদ্ধান্ত। সে সময় লেবার দলের আরও কয়েকজন যুদ্ধের বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁরা নীতির প্রশ্নে আপস করেননি। তাঁদের সেই সিদ্ধান্ত ব্যাপক প্রশসিংত হয়। লেবার দল নীতিগতভাবে পক্ষে অবস্থান নিলেও রুশনারা আলী রবিন কুকের মতো আপস করেননি।

এদিকে ২০১৫ সালের মে মাসে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। লেবার দল বেথনাল গ্রিন বো আসন থেকে রুশনারা আলীকে আবার মনোনয়ন দিয়েছে। ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া ইস্যুতে এই আসনের ভোটারদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া। রুশনারা আলী যদি কোনো কারণে এড মিলিব্যান্ডের মতো ডেভিড ক্যামেরনকে সমর্থন দিতেন, তাহলে তাঁর আসনের ভোটারদের মনে দাগ লাগত সন্দেহ নাই। জনমত জরিপেও সেটা উঠে এসেছে।

লেবার দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মিলিব্যান্ড প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে যুদ্ধে যেতে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে রুশনারা আলী আইএসবিরোধী অবস্থান যেমন সুস্পষ্টভাবে নিয়েছেন, ঠিক তেমনি তিনি তাঁর আসনের সিংহভাগ ভোটারের মনও জয় করেছেন। ওনা কিংয়ের মতো ভুল তিনি করেননি।

ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনের অন্য চার বাংলাদেশি ভোটার-অধ্যুষিত নির্বাচনী আসনের দিকে তাকালে দেখা যায়, কনজারভেটিভ ও লেবার দল উভয়ই যে আসন থেকে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, শুধু সেই আসনেই বাঙালি প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। তাই রুশনারা সেসব হিসাবনিকাশ এবং ব্রিটিশ রাজনীতির সেই অন্ধকার দিকগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ কথা বলাই যায়।

সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে লেবার দল বেশ এগিয়ে। কিন্তু তাদের নেতৃত্বের গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনীন নয়। নতুন ভোটার যাঁরা ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবেন, তাঁদের কাছে মিলিব্যান্ডের গ্রহণযোগ্যতা ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

লেবার দল আগামী নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে রুশনারার বর্তমান ইমেজ দলে তাঁর অবস্থান দৃঢ় করবে। এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ পাওয়ারও সম্ভাবনা তো থাকছেই। লেবার দল এবং ব্রিটেনের রাজনীতিতে রুশনারা আলী ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছেন। ভবিষ্যতে তাঁর এই দলের প্রধান হওয়ার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। অবশ্য এ জন্য তাঁকে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ।

সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য