ভিসা সমস্যার কারণে চিন্তিত ফারুক

মেশিন চালাচ্ছেন ফারুক আহমেদ
মেশিন চালাচ্ছেন ফারুক আহমেদ

একটি মেশিন ঘাস কেটে সামনের দিকে যায়। অন্য মেশিন ওই ঘাস সংগ্রহ করে। দ্বিতীয় এই মেশিনটিই চালাচ্ছেন ফারুক আহমেদ। গাড়ির চালক হওয়ার স্বপ্ন বুকে বেঁধে তিনি চালাচ্ছেন এই মেশিন। মূলত এই মেশিনও একটা গাড়ি। রোদের তেজ তাঁর কাজের গতি কমাতে পারছে না। বাঙালি পরিচয় দিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলাম।
ফারুকের লেখাপড়া ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত। তবে বোধের পরীক্ষায় তিনি অনেক দূর এগিয়ে। গুছিয়ে কথা বলেন। আমি যখন কথা বলি, তখন তাঁর চোখ-মুখ বেয়ে ঘাম ঝরছে। গায়ের রং শ্যামলা। তবে মুখটা বেশ পরিচ্ছন্ন। নিয়মিত দাড়ি কাটেন বলেই মনে হলো। চুলের দৈর্ঘ্য, এর রং ইত্যাদিতে রুচির পরিচয় পাওয়া গেল।
সাত বছর হলো আবুধাবিতে এসেছেন। এক ভাই বাড়িতে থাকেন। একটি গ্যারেজে তিনি চাকরি করেন। ফারুকের জন্মস্থান চট্টগ্রামে। গ্রাম পটিয়া থানার কয় গ্রাম। ফারুকের গাড়ির নাম ট্রাকটর সুইপার।
মেশিনটির কাজ ভালোভাবে দেখালেন আমাকে। বর্ণনা করলেন নিখুঁতভাবে। এর জালে সংগৃহীত হচ্ছে মেশিন দিয়ে কাটা ঘাস। সেই ঘাস চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছে কাচরার আধারে।
ছাব্বিশ-সাতাশ বছরের এই তরুণের সামনে এখন দ্বিস্তরের সমস্যা। প্রথমত, ভিসা-প্রক্রিয়া চালু না থাকা। দ্বিতীয়ত, হেলপারের ভিসায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার সুযোগ না থাকা। প্রথম সমস্যাটি কাটলে হয়তো ফারুক দ্বিতীয়টি সমাধানের চেষ্টা নেবেন।
ভালোই আছেন বললেন ফারুক। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এক বোনের বিয়েতে তিনি তাঁর বাবাকে সাহায্য করতে পেরেছেন। চাচাতো ভাই তাঁকে এনেছেন এই দেশে। কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করলেন তাঁর নাম।
এসব তথ্যের ফাঁকে আমি ভাবছি তাঁর ড্রাইভার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। এ দেশে ভিসার মর্যাদা একটি বড় ব্যাপার। যদি কেউ অধিকতর পছন্দসই কোনো মর্যাদা নিয়ে আসতে পারে, তাহলে সহজ হয় ড্রাইভিং পরীক্ষা দিতে। তবে যা-ই হোক স্বপ্ন থাকতে হবে। স্বপ্ন না থাকলে কোনো কিছু হবেই বা কীভাবে৷
নিমাই সরকার
আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত