আমি সেই মেয়ে

তুলি এখন। ছবি: আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ
তুলি এখন। ছবি: আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

তার আছে আশ্চর্য একজোড়া সবুজ চোখ। মেয়েটির নাম তুলি। থাকে রাজশাহীর পুঠিয়ায়। তথ্য বলতে এটুকুই। কোথায় মিলবে সেই মেয়ের খোঁজ? বিশ্বের বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত তুলির ছবি নিয়ে দুদিন ধরে পুঠিয়ায় ঘুরে কোনো কিনারা করা গেল না। ভেবেছিলাম রণেভঙ্গ দেব। এর মধ্যে ডেভিডের তোলা তুলির আরেকটি ছবি পাওয়া গেল। তাতে তুলির সঙ্গে তার বড় বোন দুলিও রয়েছেন। আর তাঁদের পেছনে সন্ধ্যার আলোয় অস্পষ্ট একটা ঘর দেখা যাচ্ছে। ঘরটা বসতবাড়ি নয়। হয়তো কোনো বিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠান ছিল। পরিত্যক্ত মনে হচ্ছে। পুঠিয়ার রায়হানা ক্লিনিকের পরিচালক মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে ফোনে ফোনে কথা হতো। মেয়েটির নাম শুনেই তিনি বললেন, তিনি মেয়েটিকে চিনতে পেরেছেন। এটা তার বন্ধুর মেয়ে। ২০ অক্টোবর তিনি প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ে এলেন। কিন্তু ছবি দেখেই তাঁর মুখ মলিন হয়ে গেল। এটি তাঁর বন্ধুর মেয়ে নয়। তবে পেছনের ঘরখানা তাঁরও চেনা ঠেকছিল। বললেন, একদিন সময় পেলেই তিনি এটা খুঁজে বের করতে পারবেন। পুঠিয়ায় ফিরে সেদিন সন্ধ্যাবেলাতেই তিনি ফোন করলেন। তিনি ঘরটি খুঁজে বের করেছেন। সেই ঘরে এখনো সপরিবারে থাকে তুলি আর দুলি—দুই বোন। দুলি এইচএসসি পাস করেছেন। আর তুলি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে।
সবুজ চোখের সেই মেয়েটি
পরের দিন ওই ঠিকানায় গিয়েই সব জানা গেল। এটা পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিত্যক্ত ভবন। ঘরের পাশ দিয়ে যেতেই একটি মেয়ে চোখে পড়ল। ঠিক ছবির মেয়েটির মতো। কিন্তু এখন চোখ-মুখ আরও একটু ভরাট। আরও উজ্জ্বল। আরও লাবণ্যময়। নাম জিজ্ঞেস করতেই বলল, তুলি। তার সঙ্গে কথা আছে বলতেই সে তার বোন দুলির কাছে নিয়ে গেল। সেখানেই পাওয়া গেল তার মা ইয়াসমিন বেগম ও নানি নূর বানুকে। তুলির বাবা একজন রাজমিস্ত্রি। তুলির নানি হাসপাতালের কর্মচারী ছিলেন। সেই সুবাদে পরিত্যক্ত হাসপাতাল ভবনে তাঁদের থাকার জায়গা হয়েছে।
তাঁরা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, অস্ট্রেলিয়ান ফটোগ্রাফার ডেভিড লেজারের তোলা তুলির ছবিটি বিখ্যাত হবার ঘটনা। ডেভিড যাওয়ার সময় তাঁর ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ঠিকানায় ডেভিডের কাছে ই-মেইল পাঠিয়েছিলেন দুলি। ডেভিডের সঙ্গে তাঁদের ই-মেইলে যোগাযোগ আেছ এখনো।
দুলি জানান, দুই বোন বাড়ির পাশের মাঠে খেলছিলেন। এ সময় তুলির গায়ে লাল-সবুজ পতাকার একটি টি–শার্ট ছিল। ডেভিড তুলির একটা ছবি নিতে চান। এ জন্য পরের দিন বিকেলে আসতে চান। তাঁরা তাঁর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। 

তুলি ছবি আঁকতে পারে, গান গাইতে পারে। সে আসলে কী হতে চায়? প্রশ্নের উত্তরে তুলি শুধু লাজকু হাসল। হয়তো তাঁর স্বপ্নটা অনেক বড়। সেটা তুিল হয়তো বলতে চায় না এখনই।
—আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, রাজশাহী