নিবু নিবু প্রদীপে তেল জোগালেন যিনি

ফিউশন বুটিক আয়োজিত সংগীতসন্ধ্যায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দিচ্ছেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান। পাশে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা শিল্পী রহমান ও রুনা লায়লা। ছবি: শাহীনুর ইসলাম
ফিউশন বুটিক আয়োজিত সংগীতসন্ধ্যায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দিচ্ছেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান। পাশে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা শিল্পী রহমান ও রুনা লায়লা। ছবি: শাহীনুর ইসলাম

কানাডায় এখন গ্রীষ্মের বিদায়ক্ষণ আর শীতের আগমনী মুহূর্ত। এমন এক প্রাকৃতিক পরিবেশে অটোয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রাণভরে উপভোগ করেছেন বাংলা গান। যেনতেন শিল্পীর গান নয়, শিল্পী রুনা লায়লার গান। তাঁর গান মনে করিয়ে দিয়েছে আমাদের ফেলে আসা দিনগুলি এবং স্বকীয় সংস্কৃতিকে।
১০ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় অটোয়ার অ্যাডাল্ট হাইস্কুল অডিটোরিয়ামে ফিউশন বুটিক নিবেদিত সংগীতসন্ধ্যায় প্রায় ৭০০ বাংলাদেশিকে মাতিয়ে গেলেন রুনা লায়লা।
উপরি হিসেবে অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল অটোয়ার ডালিয়া সংগীত নিকেতন এবং আফরোজা খান লিপির নাচের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের গান ও নৃত্য পরিবেশনা, ডালিয়া ইয়াসমিনের গানের সঙ্গে আফরোজা খান লিপির নৃত্য এবং অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ফিউশন বুটিকের স্বত্বাধিকারী শিল্পী রহমান ও বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাণিজ্য সচিব দেওয়ান মাহমুদের যৌথ কবিতা আবৃত্তি।
এর পরপরই গত দুই মাসের বহুল আলোচিত, প্রতীক্ষিত ও ব্যয়বহুল সংগীতসন্ধ্যার মঞ্চে আসেন বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা। তিনি ‘দেশের জন্য যারা দিয়ে গেছে প্রাণ, ভুলিনি আমরা’ দেশাত্মবোধক এই গানটির মাধ্যমে তাঁর মনোজ্ঞ সংগীতসন্ধ্যার শুরু করেন। দীর্ঘদিন নিজস্ব সংস্কৃতি, সংগীত, সুর আর গানের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত এই যান্ত্রিক জীবনে ছুটে চলা ব্যস্ততম মানুষগুলোর জীবনে এ যেন অনেক বড় কিছু পাওয়া। যেটি হয়তো আরও কিছুদিন কানাডিয়ান না বাঙালি অথবা বাংলাদেশি কানাডিয়ান এই আত্মপরিচয়ের টানাপোড়নের সংকটে ভোগা মানুষগুলোর বাংলা প্রীতির নিবু নিবু শলতেটাকে তেলের খোরাক জোগাবে। বিশেষত নতুন প্রজন্ম বা তাদের সন্তানদের শিকড়হীন আত্মপরিচয়ের গ্লানি ঘোচাতে সহায়ক হবে।
এরপর পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক গানের ভুবনে দাপিয়ে বেড়ানো বাংলা গানের মুকুটহীন রানি রুনা লায়লা কয়েকটি হিন্দি ও উর্দু গানসহ ‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম’, ‘অনেক বৃষ্টি ঝরে তুমি এলে’, ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম’, ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না’, ‘চঞ্চল হাওয়া রে’, ‘যে জন প্রেমের ভাব জানে না’, ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’, ‘শিল্পী আমি শিল্পী, আমি তোমাদেরি গান শোনাব, তোমাদেরি মন ভরাব’সহ তাঁর গাওয়া কালজয়ী গানগুলো গেয়ে উপস্থিত সংগীতপ্রিয় দর্শক–শ্রোতাদের মন ভরান।
উল্লেখ্য, অটোয়ায় এর আগে বাংলাদেশ থেকে অনেক নামীদামি শিল্পী এসেছেন। অনেক অনুষ্ঠানই হয়েছে। কিন্তু শত শত কালজয়ী গান গেয়ে তিন থেকে চার প্রজন্মের শ্রোতাদের মন মাতিয়ে যাওয়া, বাংলা গানের পাশাপাশি ইংরেজি, হিন্দি, উর্দু, গুজরাটিসহ ১৭ থেকে ১৮টি ভাষায় এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি গানের কণ্ঠশিল্পী এবং দেশে–বিদেশে হাজারও স্টেজ প্রোগ্রামে অগণিত দর্শক–শ্রোতার মন জয় করা শিল্পী রুনা লায়লা এই প্রথম অটোয়াতে আসলেন। আর এই অসাধ্যটি সাধন করেছে স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ফিউশন বুটিক। এ কারণেই অসাধ্য সাধন যে, অটোয়ায় স্থানীয় ও বাংলাদেশি শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠানগুলোতে এর আগে টিকিটের দাম এত বেশি এবং কোনো অনুষ্ঠানকে ঘিরে এত আগ্রহ লক্ষ করা যায়নি। সাধারণত যেখানে কোনো অনুষ্ঠানে টিকিটের দাম সর্বোচ্চ ১৫ ডলার রাখতে আয়োজকেরা দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন এবং দর্শকদের উপস্থিতি নিয়ে সংশয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করেন, সেখানে এই অনুষ্ঠানের টিকিটের দাম ছিল ২৫ ডলার থেকে ৬৫ ডলার পর্যন্ত। এ ছাড়া কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানসহ বিপুলসংখ্যক দর্শকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সবকিছুর পর বলা যায়, আমরা এখনো আমাদের ফেলে আসা দিন ও স্বকীয় সংস্কৃতির প্রতি মোহাবিষ্ট।
সৌরভ বড়ুয়া
অটোয়া, কানাডা
<[email protected]>