দেড় মাসের মেয়েকে রেখে খেলেছেন

এলিনা সুলতানা
এলিনা সুলতানা

২০১৩ সালের কথা। বাংলাদেশের জাতীয় দুই ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নের ঘর আলো করে এল তাঁদের মেয়ে। এলিনা সুলতানা ও এনায়েতউল্লাহ খান। কিন্তু দেড় মাসের মেয়েকে রেখেই অনুশীলন শুরু করেন এলিনা সুলতানা। শুধু তা-ই নয়, বিরতি থেকে ফিরেই তিনি জাতীয় ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় মহিলা এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় শখের বশেই প্রথম ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু এলিনার। স্কুলের অন্যদের সঙ্গে একদিন খুলনা স্টেডিয়ামে ব্যাডমিন্টন লেখা দেখে পছন্দ করেন স্থানীয় ব্যাডমিন্টন কোচ। খুলনার ফাতিমা মিশনারি হাইস্কুলের ছোট সেই মেয়েটি এরপর ব্যাডমিন্টনে হয়েছেন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন, জয় করেছেন সাফ ব্যাডমিন্টনের পদক। গল্পটি এলিনা সুলতানার। খুলনার মিয়াপাড়া থেকে আজ তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দেশের ব্যাডমিন্টন কোর্ট।
খেলার প্রতি ভালোবাসা পরিবার থেকেই পেয়েছেন এলিনা। পরিবারের সবাই কমবেশি বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুক্ত। বড় বোন সাবিহা সুলতানা জাতীয় দলের হয়ে হ্যান্ডবল খেলেছেন।
খুলনা থেকে ঢাকায় খেলতে আসেন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়। এরপর খেলার জন্য ঢাকা-খুলনা নিয়মিত যাতায়াত—যা আজও করতে হয়। কষ্ট হলেও খেলার জন্য এ কাজটি করছেন। তবে এলিনা বলেন, ‘স্বামীর সমর্থনের জন্য এ কাজ করা সহজ হয়েছে। আমার স্বামী এখন আমার কোচও। আমাদের মেয়ে আরশি হওয়ার পরও স্বামীর সহযোগিতার জন্য খেলা চালিয়ে যেতে পারছি।
এলিনা সুলতানার প্রথম সাফল্য আসে ২০০৮ সালে। এরপর ২০১০ সালে ব্যাডমিন্টনে প্রথম জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। ২০১০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ গেমসের ব্যাডমিন্টনে ব্রোঞ্জ, একই বছর জাতীয় ব্যাডমিন্টনে একক ও দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন, পরের বছর ২০১১ সালে এককে রানার আপ, দ্বৈতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনায়ও বেশ ভালো করছেন এলিনা খান। ইডেন কলেজ থেকে ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি নেন প্রথম শ্রেণি পেয়েই। মাস্টার্সেও একই ফল আশা করছেন তিনি।

অনুশীলন আর পরিশ্রম দিয়ে এগিয়ে গেছেন এলিনা সুলতানা
অনুশীলন আর পরিশ্রম দিয়ে এগিয়ে গেছেন এলিনা সুলতানা

এলিনার মা কানিজ ফাতেমা বললেন, ‘মেয়েরা খেলাধুলায় ভালো কিছু করুক, এটা আমি সব সময় চাইতাম। নিজের কথা চিন্তা না করে মেয়ের খেলার পেছনে ছুটেছি। সন্তান আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো করছে, এটা মা হিসেবে আমার জন্য গর্বের।’
এলিনা সুলতানা আজকের অবস্থানে আসার পেছনে পরিবারের পাশাপাশি খুলনার মিয়াপাড়ার অবদানের কথা বলেছেন সমানভাবে। তিনি বলেন, ‘আমি মেয়ে হয়েও খেলাধুলা করছি, এ জন্য এলাকার মানুষের কাছ থেকে কোনো দিনও কোনো কথা শুনতে হয়নি। সবাই খুবই ভালো চোখে দেখেছেন আমার খেলাধুলায় অংশগ্রহণের ব্যাপারটাকে।’
এলিনা খুলনার মেয়ে হলেও বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের হয়ে খেলছেন। এলিনা বলেন, ‘খুলনা ব্যাডমিন্টনের সঙ্গে যুক্ত সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আর কৃতজ্ঞ আমার বর্তমান ক্লাব নারায়ণগঞ্জের নিট কনসার্নের কাছে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে এলিনা খান বলেন, ‘যত দিন সম্ভব খেলা চালিয়ে যেতে চাই। তবে এটা বলতে পারি, যেনতেনভাবে আমি খেলব না। চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, এমন একটা ফর্ম ধরে রাখতে চাই।’