বসকে চাই বন্ধুর মতো

বসের নির্দেশনাটাও আসুক গল্প-আড্ডায়, তরুণেরা এমনই চান। ছবি: সৈকত ভদ্র
বসের নির্দেশনাটাও আসুক গল্প-আড্ডায়, তরুণেরা এমনই চান। ছবি: সৈকত ভদ্র

‘অফিসে সফলতা পেতে চান? তাহলে দুটো নিয়ম মনে রাখুন।
এক, বস সব সময় সঠিক।
দুই, যদি কখনো বস ভুলও হন, তবে এক নম্বর নিয়ম অনুসরণ করুন!’
এই কৌতুক বেশ জনপ্রিয়। বসের সঙ্গে কর্মীর সম্পর্ক নিয়ে চালু আছে আরও নানা গল্প। কেমন হতে পারেন একজন বস? টেবিলের ওপ্রান্তে বসে গম্ভীর মুখে নির্দেশ দিতে পারেন। আবার অফিসে ঘুরে ঘুরে কাজের অগ্রগতির খোঁজ জানতে পারেন গল্প-আড্ডায়।
এই সময়ের কয়েকজন তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কাজের ক্ষেত্রে বন্ধুভাবাপন্ন বসই অধিকাংশের পছন্দ।
কথা হলো বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপকের সঙ্গে, যিনি শুরুতেই নামটা প্রকাশ না করার অনুরোধ করলেন। তারপর হাসতে হাসতেই বলেন, ‘বসের সম্পর্কে বললে তাঁর প্রতিক্রিয়া আসলে কী হবে, জানি না। আমার বস কাজ ছাড়া খুব কম কথা বলেন। কাজ হয়ে যায় ঠিক, কিন্তু সব সময় তটস্থ থাকতে হয়। বন্ধুভাবাপন্ন হলে হয়তো ভালো হতো। এটাও ঠিক, আমাদের তো করপোরেট অফিস, কাজের এত চাপ যে কাজ ছাড়া কথা বলার সুযোগই হয় না।’
অফিসে কর্মীর কাজের মান নির্ভর করে মনের অবস্থার ওপর। মন ঠিক থাকলে কাজ হয় চমৎকার। আবার মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত হলে সহজ কাজটাও গুবলেট হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অফিসে এসে ‘প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মতো’ রাগী বসের সঙ্গে দেখা হওয়া খুব একটা পছন্দ নয় তরুণদের। বন্ধুর মতো যিনি কথার গুরুত্ব দেবেন, সমস্যাগুলো বুঝবেন, কথা বলার সুযোগ দেবেন এবং ভুলটাও ধরিয়ে দেবেন—বস এমনই তো ভালো।

ওদিকে বসদের কী ভাবনা?
তথ্যপ্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান জানালা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি অফিসে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশটাই বজায় রাখি। এটা যে সচেতনভাবে করি তা নয়, এমনটাই আসলে আমার পছন্দ। সহকর্মীরা যেকোনো সমস্যা আমার সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। অফিসে গুমোট ভাবটা থাকে না। তাই বলে বকাঝকা যে করি না, তা নয়। সহকর্মীরা সেটা বোঝেন। অফিসটাকে ভালোবেসেই তাঁরা কাজ করেন।’
বসের ব্যবহার বন্ধুত্বপূর্ণ না হলে চলছেই না, ব্যাপারটা তেমন নয়। এ ব্যাপারে একটি বেসরকারি ব্যাংকের রিলেশনশিপ ম্যানেজার আ কা আসাদের বক্তব্য বেশ সোজাসাপ্টা। তিনি বলেন, ‘আমার বস যে আমার বন্ধুর মতো তা নয়, কিন্তু তাই বলে কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না। তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার সুযোগ আছে। আমার কাছে এমনটাই ভালো লাগে।’
আজকাল অনেক অফিসেই ‘স্যার-ম্যাডাম’ বলার চলন নেই। স্যার-ম্যাডামের চেয়ে ভাইয়া-আপুতেই তরুণেরা বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই বলে বসের কাঁধে ‘দোস্ত’ বলে হাত রাখবেন, তা হবে না! বসের সঙ্গে বন্ধুত্ব হোক, কিন্তু এই বন্ধুত্ব যেন কাজের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর না হয়। এমনটাই মনে করেন গ্রো এন এক্সেলের প্রধান নির্বাহী ও মুখ্য পরামর্শক এম জুলফিকার হোসেন। তিনি জানান, বস ও কর্মীদের প্রতি পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও শ্রদ্ধা থাকা চাই। কাজের ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তো অবশ্যই প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, বস বন্ধুত্বপূর্ণ হতে পারেন, কিন্তু বন্ধু যেন না হন। হয়তো কেউ অফিসের আচরণবিধি ভঙ্গ করলেন, কিন্তু ভালো সম্পর্কের কারণে একজন বস তাঁকে সেটা বলতে পারছেন না। এমনটা যেন না হয়।