নাচ নিয়ে দেশে-বিদেশে

প্রিয়াংকা
প্রিয়াংকা

মাত্র তিন বছর বয়সে নাচের জগতে পা পড়েছে তার। ‘...মোমের পুতল, মোমের দেশের মেয়ে..’ গানের সঙ্গে নাচ—সেই প্রথম মঞ্চে ওঠা। সেই ছোট মেয়েটি এখন রীতিমতো নৃত্যশিল্পী—প্রিয়াংকা। পুরো নাম র্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস। আর প্রিয়াংকা এখন পরিচিত বাংলাদেশের গৌড়ীয় নৃত্যশিল্পী হিসেবে।
চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশে বাংলা নাচ নিয়ে গেছেন এই নারী। প্রাচীন বাংলার বিশেষ ধরনের এক নাচের নাম গৌড়ীয় নৃত্য। এ নাচেই পারদর্শী তিনি। ছোটবেলায় সবাই র্যাচেল নামে ডাকলেও এখন সবার কাছে সে প্রিয়াংকা নামেই পরিচিত।
বয়সে তরুণ হলেও অভিজ্ঞতার ঝুলিটা বেশ ভরা প্রিয়াংকার। ২০১২ সালে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তর আমেরিকার বাঙালি সম্মেলন আয়োজিত শাস্ত্রীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জয় করেন তিনি। ২০১১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত একাডেমি আয়োজিত নৃত্য প্রতিযোগিতায় গৌড়ীয় নৃত্যে প্রথম স্থানও ছিল তাঁর দখলে। জানালেন, ‘শামীম আরা নিপা ও শিবলী মহম্মদের নাচ দেখেই নাচের ভুবনে আসা।’
প্রিয়াংকার জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা সব ঢাকাতেই। স্কুল-কলেজে খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। কলেজে হ্যান্ডবল খেলেছেন নিয়মিত। ২০০৭ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে পড়তে চলে যান রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেই গৌড়ীয় নৃত্যে এমফিল করছেন।
প্রিয়াংকা জানান, ‘নৃত্যও কিন্তু পড়ার বিষয়, গবেষণার বিষয়। নাচে সব ধরনের কলা সম্পর্কে জানতে হয়, পড়তে হয়। একদিন পিএইচডি করে দেশে ফিরে নাচের ভুবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাই।’ এর আগে হলি ক্রস কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতনাট্যমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

র‍্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস
র‍্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিস

প্রিয়াংকার মা রোজলীন প্যারিস আর বাবা জন প্যারিস। একসময় চিকিৎসক, প্রকৌশলী হতে চাইতেন প্রিয়াংকা। কিন্তু নবম শ্রেণিতে এসে নাচের ভুবনে আসবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। ‘ছোটবেলায় নাচ শেখার সময় অনেকবার প্রিয়াংকার হাত-পা ভেঙেছে। কিন্তু কোনো দিনও নাচ থেকে আগ্রহ হারায়নি প্রিয়াংকা।’ এমনটাই বলছিলেন রোজলীন প্যারিস। জানালেন, সবাই যখন পেশাজীবন নিয়ে চিন্তা করত তখন থেকেই প্রিয়াংকা নাচ ছাড়া আর কিছুই ভাবত না।
নাচ শিখতে গিয়ে কয়েকবার দাঁতও ভেঙেছে প্রিয়াংকা। বললেন, ‘তবে আমার ধ্যানজ্ঞান সব নাচের ছন্দের মধ্যে এখন। আজীবন এই নাচ চর্চা করে যাব।’
প্রিয়াংকার নাচের শিক্ষকেরাও তাঁকে নিয়ে বেশ গর্বিত। তাঁর গুরু শিবলী মহম্মদ বললেন, ‘নাচের দুনিয়ার প্রিয়াংকা অনেক আগে থেকে টেলিভিশন, মডেলিং করার জন্য ডাক পেয়েছে, কিন্তু ও নাচ শিখে যাচ্ছে।’
নাচের দুনিয়ার এই তরুণ বাংলাদেশ আর ভারত দুদেশেই আলোচিত। নিয়মিত বাংলাদেশ টেলিভিশন আর ছায়ানট নৃত্য উৎসবে অংশগ্রহণ করছেন তিনি। এই তো কদিন আগে প্রথম জাতীয় নৃত্যনাট্য উৎসবেও পরিবেশনা ছিল তাঁর। ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে নরওয়েতে নৃত্যাঞ্চলের নাচ পরিবেশনা দলের সদস্যও ছিলেন প্রিয়াংকা। ভবিষ্যতে গৌড়ীয় নৃত্য আর ভরতনাট্যম নিয়ে আরও কাজ করতে চান এই নৃত্যশিল্পী।