ভাষার টানে সীমানা পেরিয়ে

কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থী
কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষার্থী

পথে পথে নানা ঘটনা। সেসব পরে বলি। সবচেয়ে অবিস্মরণীয় ঘটনাটাই আগে বলি। ২১ ফেব্রুয়ারির সকাল। কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের মাঠ যেন হয়ে উঠল একখণ্ড বাংলাদেশ। হাজার দুয়েক শিক্ষার্থীর এক বিশাল মিছিল, তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছি আমরা বাংলাদেশি আট তরুণ। সবার হাতে ব্যানার আর কণ্ঠে প্রভাতফেরির গান—‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...।’ শহরের বিভিন্ন স্থানে মিছিল শেষে আমরা আবার মিলিত হই সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের মাঠে। তারপর মাঠের শহীদবেদিতে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া মশাল রাখি। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করি শহীদবেদিতে। 
কে ভেবেছিল এবারের একুশে ফেব্রুয়ারিটা এ রকম অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে! দেশের বাইরে উদ্যাপন করতে হবে মহান শহীদ দিবস! দুই বাংলার সংহতির আহ্বানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ আয়োজিত ‘টর্চলাইট র্যা লি ফর পিস’-এ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটজন শিক্ষার্থীর একটি দল গিয়েছিলাম কলকাতায়। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল এপার বাংলা ও ওপার বাংলার মধ্যকার মেলবন্ধন দৃঢ় করা।
আমরা কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি ১৭ ফেব্রুয়ারি। আমাদের দলের সদস্য ছিলেন নাট্যকলা বিভাগের রিয়াদ আহমেদ, বাংলা বিভাগের নাবিল আল জাহান, সমাজকল্যাণ বিভাগের কাজী আবু সালেহ, ফাইন্যান্স বিভাগের আবুল হাসান ফারায, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সামি শিহাব, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজির সামিন ফারহান, তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের আদিলুজ্জামান ও ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট থেকে আমি নিশাত রায়হান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শান্তির মশাল হাতে আমরা প্রথমে যাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে শহীদবেদিতে সম্মান জানিয়ে আমরা রওনা হই ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের পথে। রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আমাদের গন্তব্য যশোরের বেনাপোল সীমান্ত। বিজিবি সদস্যরা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা এবং সংহতির মশাল তুলে দেন বিএসএফ সেনাদের হাতে। এরপর পরিবেশিত হয় ভারতের জাতীয় সংগীত।
এরপর আকাঙ্ক্ষিত ‘২১ ফেব্রুয়ারির সকাল’। পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত উপ–হাইকমিশনার মিয়া মোহাম্মাদ মাইনুল কবির এবং জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার জন ফেলিক্স রাজ বাংলাদেশ থেকে আসা সংহতির প্রজ্বলিত মশাল গ্রহণ করেন এবং কলেজ মাঠে নির্মিত শহীদবেদিতে স্থাপন করেন। এদিন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় বাংলাদেশের ওপর নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র। সে সঙ্গে পরিবেশিত হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তারপর দেশে ফেরা। কলকাতা থেকে ফিরে আসার পথে বারবার মনে হচ্ছিল কলকাতার বুকে যেন এক টুকরো বাংলাদেশ আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সত্যি অসাধারণ কিছু সময় কাটল বাংলা ভাষার অন্য এক ভূখণ্ডে।