মালদ্বীপের ফুটবলে পলাশপুরের সাবিনা

ঢাকায় বাফুফে​ চত্বরে সাবিনা খাতুন, ছবি: হাসান রাজা
ঢাকায় বাফুফে​ চত্বরে সাবিনা খাতুন, ছবি: হাসান রাজা

ফুটবলার সাবিনার রয়েছে অনন্য এক অর্জন। সাবিনা খাতুন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে খেলছেন বিদেশের কোনো ক্লাবে।
বাংলাদেশের মহিলা ফুটবলের জন্য এ এক আনন্দের খবর। সেই ১৯৭৫ সালে কাজী সালাউদ্দিন খেলেছিলেন প্রথম বিদেশের ক্লাবে—হংকংয়ের এফসি ক্যারোলিনে। এরপর কায়সার হামিদ, জুয়েল রানা, প্রয়াত মোনেম মুন্নাসহ অনেকেই খেলেছেন ভারতের বিভিন্ন ক্লাবে। এই তালিকার সর্বশেষ সংযোজন—জাতীয় দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। ডাক পেয়েছিলেন আইএসএলে, অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতা ক্লাবে। এই মুহূর্তে মালদ্বীপের পুলিশ ক্লাবের হয়ে খেলছেন সাতক্ষীরার পলাশপুরের মেয়ে সাবিনা।
পাকিস্তানে ২০১৪ মহিলা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ে দুটি গোল করেছিলেন জাতীয় দলের এই স্ট্রাইকার। ওই খেলাই নজর কেড়েছিল মালদ্বীপ ফুটবল-কর্তাদের। এরপর এল এই সোনালি সুযোগ। ১৪ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মালদ্বীপের এই টুর্নামেন্টের জন্য সাবিনার সঙ্গে ৮০০ ডলারের চুক্তি হয়েছে ক্লাবটির। এর বাইরে আবাসন, খাওয়া এবং বিমানভাড়াসহ আনুষঙ্গিক সব খরচই বহন করবে মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাব।
বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য এটা বড় প্রাপ্তিই মানছেন বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল কমিটির কো-চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, ‘মহিলা ফুটবলের যে ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে, এটা তারই পুরস্কার। আমাদের মেয়েরা বিদেশের ক্লাবে খেলতে যাচ্ছে, এটা অনেক বড় পাওয়া। আশা করব, আগামী দিনগুলোতে আরও অনেকে বিদেশের মাটিতে খেলবে।’
সাবিনার এই উত্থান রূপকথার গল্পের মতোই। পাঁচ বোনের সংসারে তিনি চতুর্থ। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু মেয়েকে পড়ানোর খরচ চালানোর সামর্থ্য ছিল না বাবা সৈয়দ গাজীর। অথচ সেই মেয়েই ফুটবল খেলে উপার্জন করছেন, সংসারের উন্নতিতে রাখছেন অবদান। বর্তমানে সাতক্ষীরা কলেজের দিবা-নিশি শাখায় উচ্চমাধ্যমিক পড়ছেন সাবিনা।
ডানপিটে সাবিনা স্কুলে ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলতেন। সেখানেই চোখ পড়ে জেলা ফুটবল কোচ ‘আকবর স্যারের’। তিনিই প্রথম ২০০৯ সালে ঢাকায় আনেন সাবিনাকে। সেবার খেলেন সিটিসেল জাতীয় মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে। সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার তো পেলেনই, বোনাস হিসেবে পরের বছর এসএ গেমসেও ডাক পেলেন সাবিনা। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধারাবাহিকভাবে খেলেছেন ঢাকা মহানগর মহিলা ফুটবল লিগে, কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবলে হয়েছেন সেরা খেলোয়াড়। সর্বশেষ গত মৌসুমেও ১৭ গোল করে হন সর্বোচ্চ গোলদাতা। এ পর্যন্ত ঘরোয়া ফুটবলে ১১৬টি গোল করেছেন ‘গোলমেশিন’ খ্যাত সাবিনা।
মেয়েদের উপার্জনেই সংসারটা চলছে সাবিনাদের। এতে এতটুকু আক্ষেপ নেই। বরং তৃপ্তির সঙ্গে বললেন,‘আমরাই বাবার ছেলে। প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে বিদেশে খেলতে যাচ্ছি শুনে খুব খুশি আমার বাবা-মা।’
শুরুটা করে দিলেন সাবিনা। এবার তাঁর পথ ধরে সানজিদা, লিপিদেরও এগিয়ে যাওয়ার পালা। ব্রাজিলের প্রমীলা ফুটবলার মার্তা সাবিনার আদর্শ। ব্রাজিলের মতোই একদিন বিশ্বে মাথা উঁচু করে খেলতে চান সাবিনারা। স্বপ্নের শুরুটা কি তাহলে এখানেই?