ধাঁধার চক্করে...

তরুণেরা রুবিক’স কিউব মেলাতে পছন্দ করেন। মডেল: কিরণ। ছবি: অধুনা
তরুণেরা রুবিক’স কিউব মেলাতে পছন্দ করেন। মডেল: কিরণ। ছবি: অধুনা

সুডোকু, শব্দজট কিংবা রুবিক’স কিউব মেলানো—এসব বুদ্ধির খেলা। কৌশলগুলো যিনি জানেন, তাঁর কাছে ‘ছেলেখেলা’ও মনে হতে পারে। আর যিনি জানেন না, তাঁর জন্য রীতিমতো ‘রকেট সায়েন্স’—বড্ড কঠিন! তারুণ্যের স্লোগান যখন ‘কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’, তখন আর ভয় কিসে? ধাঁধা মেলানোর এই খেলাগুলোই তরুণেরা খেলছেন আগ্রহ নিয়ে।
ঢাকার সেন্ট যোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ুয়া সাকিব ইবনে রশীদের সঙ্গে রুবিক’স কিউবের প্রথম দেখা হয়েছিল দুই বছর আগে। রঙিন, চতুষ্কোণ বস্তুটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছিল যখন, বন্ধুরা পাশ থেকে টিপ্পনী কেটেছিল, ‘তোকে দিয়ে হবে না’। তারপর? ‘একটা জেদ চেপে গিয়েছিল। আইনস্টাইন বলেছিলেন, পৃথিবীর ৯৮ শতাংশ মানুষ এই ত্রিমাত্রিক ধাঁধা মেলাতে পারবে না। ভাবলাম, দেখি বাকি ২ শতাংশ মানুষের মধ্যে আমি পড়ি কি না। সেই থেকে চেষ্টা শুরু করলাম।’ বলছিল সাকিব। এখন রীতিমতো ওস্তাদ হয়ে গেছে! কিউব মেলানোর বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় নিয়মিত। অবসরটাও রুবিক’স কিউবের সঙ্গেই কাটে। এই নেশার জন্যই এখন কোনো বিষয়ে মনোযোগ দেওয়াটা তার জন্য অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। বলে, ‘আগে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু করার সময়ও আশপাশের সব শব্দ কানে আসত। এখন নির্দিষ্টভাবে একদিকেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারি।’ শুধু সাকিব নয়, হলিউড তারকা উইল স্মিথ কিংবা বলিউডের আমির খানসহ অনেকেই রুবিক’স কিউবের ভক্ত। রুবিক’স কিউব মেলানোর প্রতিযোগিতাও সারা বিশ্বেই প্রচলিত।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সামিয়া জাহানের শখ ওয়ার্ড পাজল বা শব্দজট মেলানোর। অফিসে যাওয়ার পথের যানজট তাঁকে শব্দজট মেলানোর সময় করে দেয়। বলছিলেন, ‘আমি অত মেধাবী না। ধাঁধা মেলাতে ভালোবাসি, সেটাও বলব না। ছোটবেলা থেকে অঙ্ককে ভয় পেতাম। কিন্তু শব্দ মেলানোর খেলা খুব মজা লাগে। যতক্ষণ পর্যন্ত না মেলে, ততক্ষণ শান্তি পাই না। আমার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ওয়ার্ড পাজলের গেম আছে, প্রতিদিন অফিসে যাওয়ার পথে গাড়িতে বসে বসে সমাধান করি।’
মস্তিষ্কের ধূসর কোষগুলোকে সতেজ রাখতে এমন খেলা বেছে নিচ্ছেন তরুণেরা। মাথা ঘামানোর আরেক খেলা সুডোকুর এক ভক্তের গল্প বলি। সাত বছর ধরে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকার সুডোকু মেলান। বয়সটা ধর্তব্যের মধ্যে না পড়লে তিনিও একজন তরুণই বটে। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী! তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সুডোকু আর ক্রস ওয়ার্ডের প্রতি আমার আগ্রহ। ধাঁধা দেখলেই সমাধান করার জন্য একটা “মানসিক চ্যালেঞ্জ” অনুভব করি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সুডোকু সমাধান করাটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে যখন সুডোকু বা শব্দজট ছাপা না হয়, তখন মন খারাপ হয়ে যায়। ব্রিটিশ পত্রিকাগুলোতে এক পাতাজুড়েই সুডোকু ছাপতে দেখেছি।’