প্রযুক্তিতে মেয়েদের এগিয়ে নিতে চান

ফারাহ নাযীফা। ​ছবি: খালেদ সরকার
ফারাহ নাযীফা। ​ছবি: খালেদ সরকার

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বা আইসিটির সুবর্ণ সময় এখন। বাংলাদেশও এগোচ্ছে প্রযুক্তিতে। কিন্তু এই উন্নতি যেন পূর্ণতা পাচ্ছে না। কারণ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক যে নারী তাঁরা পিছিয়ে আছেন প্রযুক্তিক্ষেত্রে। প্রযুক্তি শিক্ষা কিংবা কর্মক্ষেত্রে তাঁদের অবদান বেশ কম। এ চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা প্রযুক্তি-দুনিয়াতেই এমন। নারীদের প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় এগিয়ে নিতে চান ফারাহ নাযীফা। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি গুগল ডেভেলপার্স গ্রুপের (জিডিজি) মাধ্যমে তাই তিনি নারীদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে উইমেন টেকমেকার্স সম্প্রতি যে দুজনকে প্রধান (লিড) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে গুগল, ফারাহ তাঁদের একজন। আরেকজন দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রাখশান্দা রুখাম।
ফারাহ জানান, শুধু প্রোগ্রামাররাই কিন্তু সফটওয়্যার উন্নয়নে ভালো করে। তাই শুধু পাস করার জন্য পড়লেই চলবে না। দক্ষ হতে হবে প্রোগ্রামিংয়ে। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে মেয়েদের ভয় দূর করে তাঁদের এগিয়ে আসার কথা বললেন ফারাহ। ভুল হতেই পারে, তবে থেমে থাকা চলবে না। ফারাহ নিজেও নিয়মিত প্রোগ্রামিং করেন।
দেশব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরব্যাপী নানা আয়োজনে মেয়েদের প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী করতে চান ফারাহ। মেয়েদের মধ্যে যথেষ্ট মেধা আছে, দরকার শুধু তাঁদের সঠিক রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া। ফারাহ বলেন, ‘প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় তালিকার ওপরের দিকে সবাই ছেলে। অথচ সেখানে মেয়েদের থাকাটাও জরুরি। আমি তাই উদ্বুদ্ধ করতে চাই, একই সঙ্গে তাঁদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে চাই। কিংবা সেটা হতে পারে মোবাইল অ্যাপ তৈরি বা অন্য কিছু।’
গত মাসে উইমেন টেকমেকার্স লিড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী ফারাহ নাযীফা ২০১২ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছেন। গুগল ডেভেলপার্স গ্রুপ (জিডিজি), ঢাকার সঙ্গে কাজ করে আসছেন অনেক দিন ধরে। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে জিডিজির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আয়োজক হিসেবে ছিলেন, গুগলের ডেভ ফেস্টগুলোতে কাজ করেছেন তিনি। ফারাহ বললেন, ‘উইমেন টেকমেকার্স লিড হওয়ার আগে আমি “কমিউনিটি লিড” হিসেবে কাজ করেছি। দীর্ঘদিন ধরে এই ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করেছি বলেই হয়তো আমাকে লিড হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।’
ফারাহ নাযীফার বাড়ি কুমিল্লায় হলেও তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবা মো. এনায়েত করিম সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। মা ফাতেমা আক্তার ঢাকা প্রিপারেটরি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের রসায়নের অধ্যাপিকা। ফারাহ লন্ডন গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ২০০৮ সালে ও-লেভেল এবং ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে ২০১০ সালে এ-লেভেল সম্পন্ন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগে ভর্তি হন। পড়াশোনা শেষ করে অধ্যাপনা করতে চান তিনি। তার আগে স্নাতকোত্তর শেষ করে পিএইচডি করার ইচ্ছা আছে বলে জানালেন। বললেন, ‘এখনো যদিও অনেকটা বাকি। তত দিনে কী হবে এখনই বলতে পারছি না। তবে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা গ্রহণ করলে আমি আরও অনেককে প্রযুক্তিতে আগ্রহী করে তুলতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’