সেরা সালমা

খুলনার মেয়ে সালমা খাতুন। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি দারুণ টান। বোলিং-ব্যাটিং—দুটোতেই তুখোড়। ক্রিকেটার হবেন, কল্পনাও করেননি কোনো দিন। অথচ তিনিই এখন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের কান্ডারি। কেবল কি দেশে? ক্রিকেটের সবচেয়ে কনিষ্ঠ সংস্করণ টি–টোয়েন্টিতে নারী বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এখন আমাদের সালমা।
সালমা খাতুন। ছবি: সুমন ইউসুফ
সালমা খাতুন। ছবি: সুমন ইউসুফ

সামি তার খালামণির সঙ্গে আড়ি নিয়েছে। জানিয়ে দিয়েছে, খালামণির কাছ থেকে কিচ্ছু নেবে না। সামির অভিমানের কারণ জানা গেল ‘খালামণি’ সালমা খাতুনের কাছ থেকে, ‘আমার সঙ্গে খেলতে পারছে না বলে এত অভিমান। আমি থাকলে ওর আর কিছু লাগে না।’ সামি তার খালামণির মতোই ক্রিকেটার হতে চায়। তার খালামণি আমাদের সালমা খাতুন, বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক।
সাত বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কাজটা কত সহজে করছেন সালমা? কীভাবে সম্ভব? ‘ব্যবহার, আচরণ ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি। সবার সঙ্গে সমানভাবে মিশেছি। ভালো–খারাপ—সব দিনে পাশে থেকেছি। ওরাও মনে হয় আমাকে খুব পছন্দ করে।’ বলেই বেশ হাসলেন। সফল মানুষের সুখী মানুষের হাসির দ্যুতি চারপাশকে আলোকিত করল যেন।

সালমা খাতুন। ছবি: সুমন ইউসুফ
সালমা খাতুন। ছবি: সুমন ইউসুফ

সালমা জানালেন, জীবনে আর কিছু চাওয়ার নেই। এক জীবনে অনেক ভালোবাসা, সাফল্য, শ্রদ্ধা পেয়েছেন। তিনি কখনো ভাবেননি খুলনার বাড়ি থেকে এসে কোনো দিন তারকা হোটেলে থাকতে পারবেন। তবে ক্রিকেটার হওয়ার প্রতিভা নিয়েই যেন জন্মেছিলেন। চার ভাইবোনের মধ্যে সালমা সবার ছোট। খুলনায় নানার বাড়িতে মা-বাবা, ভাইবোন সবাই থাকতেন। মামারা এলাকার প্রভাবশালী। তাই বাড়তি সুবিধা পেতেন সালমা। ছেলেরা ক্রিকেট খেলার সময় সালমাকে নিত। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় ব্যাট হাতে তুলে নিলেন। এলাকাভিত্তিক খেলার সব মেডেল, ট্রফি সালমাই পেতেন। ১১ জনের দলে সালমা একমাত্র মেয়ে। কিন্তু তাঁর কারণে দল জিতত। ভরদুপুরে জানালার কাছে যখন তাঁর খেলার সঙ্গীরা ডাকতেন, মাঝেমধ্যে মা দিতেন বকা। কিন্তু মেয়ের ইচ্ছা-স্বপ্নকে তাঁর মা-বাবা গুরুত্ব দিয়েছেন। ২০০২ সালে সালমার বাবা মারা যান। আর ২০০৭ সালে সালমা জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পান। এটা সালমার জীবনের অপূর্ণতা। মেয়ের সাফল্য দেখে যেতে পারেননি বাবা। মা এক–আধটু রাগ করলেও বাবা কখনো রাগ করেননি।
২০০৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হন সালমা। জীবনের অন্যতম সেরা দিন, ‘এর সবই সম্ভব হয়েছে আমার কোচ এহসান স্যারের জন্য। আজকে এত দূর পর্যন্ত তাঁর সাহায্য পেয়েছি। তিনি সব সময় বলতেন, অনেক কথা বলা যায়, কিন্তু মাঠে কাজ করাটাই আসল। ঠান্ডা মাথায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে অধিনায়ককে।’
সাকিব আল হাসান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, সালমাও। টি–টোয়েন্টির সেরা নারী বোলারদের মধ্যে দ্বিতীয়। কেমন লাগে ব্যাপারটা? ‘সাকিব ভাই আমার প্রিয় খেলোয়াড়। এ ছাড়া মুশফিক ভাই, মাশরাফি ভাইয়ের খেলা ভালো লাগে। আমার প্রিয় অধিনায়ক কিন্তু মুশফিক ভাই। আর শচীন টেন্ডুলকারের খেলা দেখে ছোটবেলায় অনুপ্রাণিত হতাম। সাকিব ভাইয়ের মতো আমিও ১ নম্বর হতে পেরেছি, এটা খুব ভালো লেগেছে। বলে বোঝানো সম্ভব না। তিনি তাঁর ফেসবুকে আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। এটা অনেক বড় পাওয়া আমার কাছে।’
সালমার নামে ফেসবুকে অনেকগুলো পেজ, অ্যাকাউন্ট আছে। এর কোনোটিই তিনি ব্যবহার করেন না। ফেসবুকে অহেতুক সময় নষ্ট হয়, এটা তাঁর কাছে মনে হয়। অবসর মিললে টিভিতে খেলা দেখেন। অন্যের খেলা দেখেও শেখা যায় অনেক। দলের অন্য খেলোয়াড়দেরও ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করেন।