সিতারা আপার জন্য এলিজি

অধ্যাপক সিতারা পারভীন, ১৯৮৮ সালে ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে
অধ্যাপক সিতারা পারভীন, ১৯৮৮ সালে ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে

২৩ জুন ২০০৫ থেকে ২৩ জুন ২০১৫। এক দশক অতিক্রান্ত। আমাদের নাগরিক ব্যস্ততার ভিড়ে চুপিচুপি কবে যে ১০ বছর পেরিয়ে গেল, টেরই পেলাম না। ‘ক্লোজ শট’ থেকে ‘ওয়াইড’ এবং ক্রমশ ‘ফেড আউট’ হতে হতে দৃষ্টির অন্তরালে চলে গেছেন অধ্যাপক সিতারা পারভীন—আমাদের প্রিয় সিতারা আপা। একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু তবে কত?
২৩ জুন। বছর ঘুরে ক্যালেন্ডারের পাতায় বারবার ফিরে আসে কালো অক্ষরে লেখা এই তারিখটি। আজ থেকে ঠিক ১০ বছর আগে এই দিনে সিতারা পারভীন, আমাদের প্রিয় সিতারা আপা যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো থেকে ক্যানসাসে যাওয়ার পথে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। মৃত্যুর কদিন আগে তিনি একটি সম্মেলনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। ২৩ জুন ছিল তাঁর জীবনের শেষ পথচলা। তারপর, বাকি সব ইতিহাস।
সিতারা পারভীনের জন্ম ১৯৫৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কন্যা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (সম্মান) ও এমএ এবং পরে সাংবাদিকতা বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পিএইচডি করেন ইংল্যান্ডের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
১৯৮২ থেকে আমৃত্যু তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ছিলেন।
আমি ছিলাম তাঁর একজন ভক্ত, সাংবাদিকতা বিভাগের একজন সাধারণ শিক্ষার্থী। আমার চোখে তিনি শুধু বড় মাপের শিক্ষকই ছিলেনই না, তিনি ছিলেন বড় মনের মানুষও। তিনি তাঁর অল্প পরিচিত কোনো শিক্ষার্থীর ছোট্ট প্রয়োজনেও এগিয়ে আসতেন। কখনোই ব্যক্তিত্বের দেয়াল তৈরি করতেন না। শিক্ষার্থীরা তাঁর স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে পারত। সিতারা আপা ছিলেন আমার যেকোনো সমস্যার ত্বরিত সমাধান ক্ষেত্র। আপা বলতেন, ‘অ্যাভয়েড নেগেটিভ থিংকিং, দেখো এতেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ সামান্য এই দর্শনটি একসময় আমাকে আমূল আলোড়িত করেছিল। আমি এখনো তাঁর এ কথাটি বিশ্বাস করি। মান্য করি এবং প্রয়োগ করার চেষ্টা করি।
সিতারা পারভীন ছিলেন চিরতরুণ। জরা তাঁকে কখনোই স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন তাঁর সর্বশেষ শিক্ষার্থীর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। হাজারো শিক্ষার্থীর হৃদয়ে স্থায়ী আসন পাতা রয়েছে তাঁর জন্য। তাঁর মৃত্যুর এক দশক পরে কোনো আনুষ্ঠানিকতায় নয়, কোনো নিয়মের বৃত্তে নয়, আমাদের প্রিয় শিক্ষক প্রিয় মানুষ সিতারা আপাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা, পরম মমতা আর ভালোবাসায়।